বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাট দুর্গ এখন

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

ঐতিহাসিক ঘোড়াঘাট দুর্গ এখন

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে সাহেবগঞ্জ মৌজায় করতোয়া নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক সময়ের রণ হুঙ্কারে গর্জে ওঠা মধ্যযুগের বৃহত্তম ঘোড়াঘাট দুর্গ। ধারণা করা হয়, ঘোড়াঘাট দুর্গ এগারো শতকে সেন আমলে নির্মিত হয়। গৌড়ীয় সুলতান বরবক শাহের সেনাপতি শাহ ইসমাইল কামতাপুরের রাজার অধিকার থেকে ঘোড়াঘাট জয় করলে প্রশাসনিক ও সামরিক গুরুত্বের কারণে দুর্গটির সংস্কার করে নতুনরূপে গড়ে তোলা হয়। সেনা ছাউনিসহ প্রতিরক্ষার প্রচুর অস্ত্রসজ্জায় সজ্জিত ঘোড়াঘাট দুর্গ সমকালীন বাংলার একমাত্র স্বয়ংসম্পূর্ণ দুর্গের মর্যাদা লাভ করে এবং দুর্ভেদ্য ও অজেয় শক্তির কেন্দ্ররূপে গড়ে ওঠে।

করতোয়া নদীর ধার ঘেঁষে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা দুর্গটির চারদিক সুউচ্চ মাটির দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত। এক সময় মাটির দেয়ালের বাইরে তিনদিক ২৩ মিটার দীর্ঘ গভীর পরিখা বেষ্টিত ছিল। পূর্বদিকটায় ছিল খাড়া পাড়বিশিষ্ট খরস্রোতা করতোয়া নদী। দুর্গটি উত্তর-দক্ষিণে লম্বা ও পূর্ব পশ্চিম দেয়ালের দৈর্ঘ্য অনুরূপ, উত্তর দেয়াল আধা মাইল এবং দক্ষিণ দেয়াল প্রায় এক মাইল লম্বা। ধারণা করা হয়, এই সীমানা কেবল দুর্গের কেন্দ্রের। বিশেষ করে দক্ষিণ দিকে আরও প্রলম্বিত ছিল। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম ধারে যে পরিখা দেখা যায়, তা প্রায় ৬০ ফুট চওড়া। পশ্চিম দেয়ালের উত্তরাংশে দুর্গের প্রধান প্রবেশ পথ ছিল। প্রধান প্রবেশ পথ থেকে ৪০০ গজ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দুর্গের দ্বিতীয় আন্তদেয়াল শুরু। দুর্গের ভিতরে ছিল প্রশাসনিক ভবন, সেনা ছাউনি, সামরিক কর্মচারীদের বাসভবন, ফৌজদারের ভবন, মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদি।

তবে এখন এই দুর্গের পরিখার ওপর ৮/১০ ফুট উঁচু লালমাটির প্রাচীর আছে, যেগুলো পথিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মাটির প্রাচীরের ওপরে আগাছা জন্মেছে। মসজিদের ধ্বংসাবশেষ ও বিক্ষিপ্ত কিছু ঢিবি ব্যতীত তেমন কিছু আর অবশিষ্ট নেই। আগাছার সঙ্গে মিশে গেছে দুর্গের চিহ্নগুলো। আস্তে আস্তে বিলীনের পথে এই দুর্গ। তাই স্থানীয়রা মনে করেন, এখনই আগামী প্রজন্ম ও পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে এই স্মৃতি চিহ্ন রক্ষায় এগিয়ে আসা উচিত।

সর্বশেষ খবর