বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্কতা

নো মাস্ক নো সার্ভিস নিয়ম কঠোর হচ্ছে

মানিক মুনতাসির

বিশ্বব্যাপী মহামারীর রূপ নেওয়া কভিড-১৯-এর প্রভাব বাংলাদেশেও কমছে না। বরং সংক্রমণ শুরুর ছয় মাসের মাথায় দ্বিতীয় ঢেউ লাগতে শুরু করেছে। এই ঢেউয়ের ভয়াবহ বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।

যদিও কভিড-১৯ শনাক্তকরণ পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের মাত্রা প্রায় প্রতিদিনই কমছে। অবশ্য সরকার দাবি করছে, এর মধ্যে ৫ কোটির বেশি মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে লকডাউনে না গিয়ে সবকিছু খোলা রেখেই দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিস্তার ঠেকাতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন জোরদার করা হচ্ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থবিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি-বেসরকারি সব দফতরে এই পলিসি কঠোর মেনে চলার সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে। এমন কি মাস্ক ছাড়া রাস্তাঘাটে বেরোলে জরিমানা গুনতে হতে পারে। কেউ কোনো দফতরে কোনো কাজের জন্য গেলে অবশ্যই তাকে মাস্ক পরতে হবে। দোকান, শপিং মল, হাট-বাজার সবখানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আগেই। তবে এটার বাস্তবায়ন খুবই ঢিলেঢালা হওয়ায় এখন পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। একইভাবে কেউ বিদেশ থেকে এলে নৌ-বিমান-স্থলসহ সব ধরনের বন্দরে কঠোর পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত না হয়ে দেশে ঢুকতে না দিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেউ করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসার পরও যদি শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে কিংবা অন্য কোনো ধরনের লক্ষণ থাকে- তাহলে বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনা নেগেটিভ না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইন বা আইসোলেশন মেনে চলতে হবে। বহির্গমনের ক্ষেত্রেও করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটাতে কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের হাসপাতালে যাতে কভিড-ননকভিড সব রোগী কাক্সিক্ষত সেবা পায়- সেটা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যবিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ জন্য সারা দেশের হাসপাতাল-ক্লিনিকে যথাযথ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সূত্র জানায়, ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কভিড-১৯ এর সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভারত শীর্ষে অবস্থান করায় বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বাহিনীকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। সংক্রামিতদের দেশে, বিশেষত ভারত থেকে আসা রোগীর দেশে প্রবেশের আগে পরীক্ষা করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে কভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউ ঠেকানোর কৌশল নিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও পরবর্তী করণীয়, টিকা প্রাপ্তিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পরিষেবা বিভাগকে একটি রোডম্যাপ তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সারা দেশের মানুষের জন্য একটি ত্রাণ সুবিধা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে জননিরাপত্তা বিভাগকে বলা হয়েছে- দেশের প্রতিটি মানুষ যেন মাস্ক পরে ঘরের বাইরে বের হয়, এটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ-কর্ম করতে বলা হয়েছে। এটা অত্যন্ত কঠোরভাবে মেনে চলার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ভারতে বর্তমানে কভিড-১৯ পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ। সে দেশ থেকে আসা সম্ভাব্য রোগীদের বা যাত্রীদের বিমান, স্থল বা নৌবন্দরেই কভিড-১৯ পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নেগেটিভ না হয়ে যেন কেউ দেশে ঢুকতে না পারে সেটাই নিশ্চিত করতে হবে। অর্থবিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুল রউফ তালুকদার বলেছেন, মারাত্মক করোনাভাইরাস দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে সরকারের হাতে পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সেই অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য সব ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রয়োজনে গণপরিবহন চলাচল স্থগিত করা হবে এবং শপিং মল ও বাজারগুলো খোলা রাখার ব্যাপারে আবার নতুন করে সময়সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর