গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বাংলাদেশে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর সরকারের ‘নিপীড়ন’ বেড়েছে। কর্তৃপক্ষের সমালোচনা এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি নিশ্চিতে সংবাদ প্রকাশের জন্যই এসব সাংবাদিককে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল দেওয়া এক বিবৃতিতে অবিলম্বে এ আইনের অধীনে দায়ের করা সব অভিযোগ প্রত্যাহার এবং আটকদের মুক্তি দেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে আইনটি দ্রুত সংশোধন করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া গবেষক সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণের জন্য এই আইনের ‘অস্পষ্টতা’কে কাজে লাগানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। এ ছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকারের সমালোচক ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ এবং দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশে সাংবাদিক নিপীড়নের ঘটনা উল্লেখ করতে গিয়ে প্রথমেই আলোকচিত্রী শফিকুল ইসলাম কাজলের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের জেরে জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র এবং অনলাইন নিউজ প্ল্যাটফর্মের অন্তত ১০ জন সম্পাদককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সরকারের সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের তথ্য উল্লেখ করে জানায়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর এই আইন করার পর থেকে এর আওতায় প্রায় দুই হাজার মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০০-এর বেশি মামলা দায়ের হয়েছে ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে। এ সময় দেশের খ্যাতনামা সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করার ঘটনাও বাড়ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এক ফেসবুক পোস্টের জন্য আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান শিখর শেরেবাংলানগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার পর ১০ মার্চ নিখোঁজ হন পক্ষকালের সম্পাদক কাজল। ওই মামলায় দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমানসহ আরও ৩০ জনকে আসামি করা হয়। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে লকডাউনে দরিদ্রদের দেওয়া ত্রাণ আত্মসাৎ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ১৯ এপ্রিল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এবং জাগোনিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় ২২ জুন দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। প্রায় দুই মাস ধরে নিখোঁজ কাজলকে হঠাৎ করে ভারতের সীমান্তবর্তী বেনাপোল থেকে গ্রেফতারের কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনো কারাবন্দী কাজলের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা করা হয়েছে।
