শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঘর গোছাতে ব্যস্ত দুই দল

৩১ জেলার কমিটি যাচাই বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ

রফিকুল ইসলাম রনি

৩১ জেলার কমিটি যাচাই বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ

সীমিত পরিসরে সাংগঠনিক কর্মসূচি ঘোষণা করলেও করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখছে আওয়ামী লীগ। শীতকালে করোনা পরিস্থিতি প্রকট হলে এখনই নতুন করে জেলা-উপজেলায় সম্মেলনে যাবে না ক্ষমতাসীন দলটি। আপাতত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা পড়া ৩১ জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। নানা মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কমিটিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।    

দলীয় সূত্র জানায়, গত বছর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগে তড়িঘড়ি করে ২৯টি জেলার সম্মেলন করা হয়। চলতি বছরে সম্মেলন হয় মাত্র দুটি জেলার। এর মধ্যে গত বছর ফেনী জেলা ২৬ অক্টোবর, নোয়াখালী ২০ নভেম্বর, খাগড়াছড়ি ২৪ নভেম্বর, বান্দরবান ২৫ নভেম্বর, রংপুর জেলা ও মহানগর ২৬ নভেম্বর, যশোর জেলা ২৭ নভেম্বর, কুষ্টিয়া জেলা ২৮ নভেম্বর, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ৩০ নভেম্বর, পটুয়াখালী ২ ডিসেম্বর, নড়াইল ২ ডিসেম্বর, সিলেট জেলা ও মহানগর ৫ ডিসেম্বর, নীলফামারী জেলা ৫ ডিসেম্বর, ঠাকুরগাঁও জেলা ৬ ডিসেম্বর, বগুড়া জেলা ৭ ডিসেম্বর, চট্টগ্রাম জেলা উত্তর ৭ ডিসেম্বর, বরিশাল মহানগর ৮ ডিসেম্বর, রাজশাহী জেলা ৮ ডিসেম্বর, বাগেরহাট জেলা ৯ ডিসেম্বর, কুমিল্লা উত্তর জেলা ৯ ডিসেম্বর, খুলনা জেলা ও মহানগর ১০ ডিসেম্বর, হবিগঞ্জ জেলা ১১ ডিসেম্বর, লালমনিরহাট জেলা                ১১ ডিসেম্বর, সাতক্ষীরা ১২ ডিসেম্বর, কুড়িগ্রাম ১২ ডিসেম্বর, ঝালকাঠি জেলা ১২ ডিসেম্বর। চলতি বছরের ১ মার্চ রাজশাহী মহানগর, ৫ মার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হয়। এসব জেলা সম্মেলনে কোথাও সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সঙ্গে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বা সাংগঠনিক সম্পাদক অথবা সদস্য পদেরও নাম ঘোষণা করা হয়। অধিকাংশ জেলায়ই দুই নেতা, কোথাও এক নেতা, কোথাও বা তিন নেতায় চলছে। প্রায় এক বছর পর জেলাগুলো পূর্ণাঙ্গ কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে জমা দেয়। ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবিত জেলা কমিটিতে অসংগতি তুলে ধরে নেতাদের পড়ে শোনান দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটি ফিরিয়ে দিয়ে তিনি কোন জেলায় কী সমস্যা রয়েছে সেগুলো তুলে ধরেন। এই জেলা কমিটিগুলো নিয়ে অভিযোগের স্তূপ জমা হয়েছে দলীয় সভানেত্রীর কাছে। ‘মাইম্যান’ স্থান দিতে গিয়ে কিংবা দল ভারী করতে গিয়ে জেলার শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সন্তান, জামায়াত পরিবারের সদস্য, শিবির কর্মী, নিষ্ক্রিয় নেতা, মাদককারবারি ও সন্ত্রাসীদের স্থান দিয়েছেন। দলের প্রাথমিক সদস্য নয়, অচেনা মুখের ছড়াছড়ি প্রস্তাবিত কমিটিতে। বাদ দেওয়া হয়েছে দুঃসময়ের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের। প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে ছাত্রদল, শিবির, যুবদল এমনকি ফ্রীডম পার্টির নেতাদের। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কারণে কমিটিগুলো বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পুনরায় যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনে নতুন করে কমিটি করতে বলেছেন। দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। নানাভাবে অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই করছেন। অসংগতি থাকলে তা দূর করার তাগিদ দিচ্ছেন।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দলের দুঃসময়ের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে। হঠাৎ করে কেউ দলে এলে তাকে প্রথমেই নেতা বানানো যাবে না। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে কোনো অবস্থাতেই অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না।’

এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা কমিটি কেন্দ্রের দফতরে জমা পড়েছে। এখানে কিছু দ্বিমত আছে। সবাই একমত হতে পারেননি বলে বিতর্ক রয়েছে কমিটি নিয়ে। আমরা যাচাই-বাছাই করছি। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে যেন ত্যাগী দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মীরা প্রাধান্য পায় সেদিক বিবেচনায় রেখে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দলীয় সভানেত্রীর কাছে জমা দেব।’

খুলনা বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা কমিটি নিয়ে যেসব অভিযোগ জমা পড়ছে তা খতিয়ে দেখছি। অভিযোগ সত্য হলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বাদ দেওয়া হবে। বিতর্কিত কেউ কমিটিতে থাকবে না।’ 

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডি অফিসে বসে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করছেন। আবার একাধিক সংস্থাও কাজ করছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। এ প্রসঙ্গে দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বগুড়া জেলার সমস্যা নিয়ে বসেছিলাম। জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি। এখন নানা মাধ্যমে তথ্য জোগাড় করছি। তথ্যগুলো হাতে পেলে প্রথমে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সব নেতার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য দলীয় সভানেত্রীর কাছে জমা দেব। তিনি বলেন, এখন জেলা কমিটি যাচাই-বাছাই করছি। নেত্রীর অনুমোদন পেলেই নতুন করে জেলা-উপজেলা সম্মেলন শুরু করব।

সর্বশেষ খবর