শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঘর গোছাতে ব্যস্ত দুই দল

আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপির ২৭ জেলা

মাহমুদ আজহার

আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে বিএনপির ২৭ জেলা

বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একটি চট্টগ্রাম উত্তর। ২০১৪ সালের ২৬ এপ্রিল গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করা হয়। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও কাজী আবদুল্লাহ আল হাছানকে সদস্য সচিব করা হয়। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ওঠায় ২০১৬ সালের ১৫ মে আসলাম চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখনো তিনি কারাগারে। বেশ কিছুদিন আগে সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল হাছানও মারা যান। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর ধরে অভিভাবকশূন্য চট্টগ্রাম উত্তর বিএনপি। ওই জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

শুধু চট্টগ্রাম উত্তর বিএনপিই নয়, নতুন করে দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া ২৭টি সাংগঠনিক জেলার চিত্র প্রায় একই। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার সময় প্রতিটি জেলার শীর্ষ নেতাদের বিএনপির কেন্দ্র থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যায়, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। আহ্বায়ক কমিটিতেই নির্দিষ্ট মেয়াদ পার হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি জেলাও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেনি। অনেক জেলা এখন করোনাভাইরাসের ইস্যু তুলে ধরছে। কিন্তু করোনার আগেও মাস পেরিয়ে বছর চলে গেলেও নানা ইস্যুতে কমিটি গঠনে বিলম্ব করে তারা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। সর্বশেষ বিএনপির জেলাগুলোর সাংগঠনিক পুনর্গঠনের হালনাগাদ অবস্থা জানতে চেয়ে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্র।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাংগঠনিক পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। কমিটি হবে, ভাঙা হবে। আবার সেখানে কমিটি হবে। এখন আমাদের অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন চলছে। বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিও হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জেলা বিএনপির অসম্পূর্ণ কমিটিগুলোও করা হবে। কমিটি করতে গিয়েও ফ্যাসিস্ট সরকারের বাধার মুখে পড়তে হয়। কোথাও সভা-সমাবেশও করতে দেয় না তারা। তারপরও নানা প্রতিকূলতায় সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, সারা দেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের কমিটি পুনর্গঠনের কাজ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চায় দলটি। এরপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দলটি মার্চে কাউন্সিল করতে চায়। এরই মধ্যে থানা-পৌর-ইউনিয়নসহ সব পর্যায়ের কমিটির হালনাগাদ তথ্য চেয়ে জেলা নেতাদের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমিটি দেওয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা মৌখিকভাবে নির্দেশনাও দিয়েছেন।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, দীর্ঘ সময় করোনায় আটকে আছে বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এখনো করোনা শেষ হয়নি। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি হচ্ছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির কমিটিও হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুরোদমে জেলা পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর আবু সুফিয়ানকে আহ্বায়ক ও মোস্তাক আহমেদকে সদস্য সচিব করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির ৬৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তিন মাসের সময়সীমা পেরিয়ে প্রায় এক বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি চট্টগ্রাম দক্ষিণের শীর্ষ নেতারা। একই দিন শেখ ফরিদ উদ্দিন বাহারকে আহ্বায়ক ও আলাল উদ্দিন আলালকে সদস্য সচিব করে ৪৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটির কোনো খবর নেই ফেনী বিএনপির। এ ছাড়া ওই সময় কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও এক বছরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয় দায়িত্বশীল নেতারা। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিলেট মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও ওই কমিটি এখন মেয়াদোত্তীর্ণ।

গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, সাতক্ষীরা, ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর, নাটোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, মাগুরা, মানিকগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও সেগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে।

২০১৯ সালের ২২ জুন শরীফ রাফিকুজ্জামানকে আহ্বায়ক এবং এম মনসুর আলীকে সদস্য সচিব করে গোপালগঞ্জে ৩৭ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর দেড় বছরেও জেলার শীর্ষ নেতারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি। একই সময়ে অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়াকে আহ্বায়ক এবং জাহান্দার আলী জাহানকে সদস্য সচিব করে মাদারীপুরে ৪২ সদস্যের কমিটি করা হয়। নানা অজুহাত দেখিয়ে জেলার শীর্ষ নেতারা এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি। অবশ্য কিছুদিন আগে ওই জেলার কমিটির কার্যক্রম স্থগিত  ঘোষণা করেছে বিএনপি।

এদিকে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ডা. মো. আনোয়ারুল হককে আহ্বায়ক ও ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে সদস্য সচিব করে নেত্রকোনা জেলা বিএনপির ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় বিএনপি। জেলার দায়িত্বশীল নেতারা এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হন। জানা যায়, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থাকা এলাকাগুলোতে নেতা-কর্মীরা বেশি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।

দল পুনর্গঠনের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁসহ আরও কয়েকটি জেলার নেতারা খুব ভালো কাজ করছেন। বিভাগের অর্ধেক পুনর্গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এম মনছুর আলী বলেন, এরই মধ্যে সব ইউনিয়ন কমিটি করেছি। এ ছাড়া চারটি পৌর ও একটি থানা কমিটিও করেছি। অনুমতি না পাওয়ায় এবং করোনার কারণে বাকি কমিটি করতে পারিনি। তবে শিগগিরই সব কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা হবে।

সর্বশেষ খবর