শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

তবু অজানা আতঙ্ক মশিয়ালীতে

খুলনায় ট্রিপল হত্যায় মূল অভিযুক্তরা গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ স্বস্তি ফিরলেও চলমান আন্দোলন কর্মসূচি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার খানজাহান আলী থানার মশিয়ালীতে আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের মূল অভিযুক্ত মিল্টন শেখ, তার ভাই জাকারিয়া ও এজাহারভুক্ত আরেক আসামি  রেজওয়ান শেখ রাজুকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। ঢাকার মিরপুরের একটি বহুতল ভবন থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘদিন তারা ওই বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। জানা যায়, ১৬ জুলাই রাতে নগরীর মশিয়ালীতে প্রভাবশালী মিল্টন ও জাকারিয়াদের গুলিতে গ্রামের নজরুল ইসলাম, গোলাম রসুল ও সাইফুল ইসলাম নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় আরও ১০ জন। পরে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী জাকারিয়ার আত্মীয় জিহাদ নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়। তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর ডিবি ইন্সপেক্টর এনামুল হক জানান,  গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ঢাকার মিরপুরের একটি বহুতল ভবন থেকে এজাহারভুক্ত মো. মিল্টন (৪০), শেখ জাকারিয়া (৩৩) এবং রেজওয়ান শেখ রাজু (২৫)-কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। হত্যাকান্ডের পর দীর্ঘদিন তারা আত্মগোপনে ছিলেন। জানা যায়, আসামিদের খুলনায় আনার পর ডিবি কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। এদিকে তিন খুনের মূল অভিযুক্তরা গ্রেফতার হওয়ায় স্বস্তি ফিরলেও চলমান আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করেনি মশিয়ালবাসী। গতকাল তারা আসামিদের দ্রুততম সময়ে শাস্তি প্রদান, অস্ত্র উদ্ধার ও এজাহারভুক্ত বাকি আসামির গ্রেফতার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ ছাড়া আগামী মঙ্গলবার একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ ডাকা হয়েছে। জানা যায়, দীর্ঘদিনেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার না হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রেজোয়ান আকুঞ্জি রাজা জানান, নৃশংস ওই ঘটনার পর আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে এলাকাবাসী মিছিল, প্রতিবাদ সভা ও স্মরণসভা করেছে। তবে যারা প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে, তাদের সবাইকে আদালতে পাল্টা অভিযোগে আসামি করা হয়েছে। আসামি মিল্টনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্র্রেট-২ এর আদালতে গ্রামের ৫৩ জনকে আসামি করে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন- ঘটনার রাতে আসামিরা রাম দা, লোহার রড, বিভিন্ন অস্ত্রপাতি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। উভর পক্ষের মারামারিতে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। পরে আসামিরা মিল্টনের বাড়িতে ঢুকে লুটপাট চালায় ও আসবাবপত্রে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই সময় মিল্টনের দুই ভাই জাকারিয়া-জাফরিনসহ ১৪/১৫টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগে নিহত সাইফুলের বাবা ও ট্রিপল মার্ডার মামলার বাদী সাইদুল শেখকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। নিহত নজরুলের ভাইপো রাসেল শেখ জানান, হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। পাল্টা মামলা দায়েরের জন্য আসামি পক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ২২ জন আসামির মধ্যে ১৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। এখনো আট আসামি গ্রেফতার হয়নি, অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার ও এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান। মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিবি) বি এম নুরুজ্জামান বলেছেন, মামলাটি ডিবি পুলিশ হাতে পাওয়ার পরই তদন্ত শুরু করে। মামলার মূল অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছে। অস্ত্র উদ্ধার ও অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর