শিরোনাম
শনিবার, ১০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
অন্যরকম

জ্ঞানের আলোর ফেরিওয়ালা

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

জ্ঞানের আলোর ফেরিওয়ালা

নওগাঁর আত্রাইয়ের প্রতিটি গ্রাম যেন শিল্পীর রং-তুলিতে আঁকা একটি স্বর্ণালি ছবি। আর এ গ্রামগুলোতেই জীবিকার খোঁজে পথে-প্রান্তরে ছুটে চলেছেন অদম্য মানুষটি। বই বিলানো যেন তার নেশা। তার একটাই প্রত্যাশা, জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হোক এই জগৎ। প্রায় দুই যুগ ধরে বই নিয়ে পথে-প্রান্তরে ব্যতিক্রমী এক বইপ্রেমী আত্রাইয়ের লোকমান হোসেন। সমাজের  মানুষের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়াই যেন তার কাজ। অজোপাড়াগাঁয়ে বসে প্রতিদিন নিত্যনতুন বইয়ের গন্ধ পাওয়া সত্যিই অবাক করার মতো। কেমন হয় যদি সকালের নাশতা সেরে নেওয়ার পরপরই পছন্দের বই নিয়ে কেউ আপনার বাড়ির সামনে হাজির হন। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ূন আহমেদ থেকে শুরু করে কালজয়ী বহু লেখকের বই নিয়ে হাজির হন আপনার সামনে। আর সেখান থেকে আপনার বেছে নেওয়ার পালা, কোন বইটি পড়বেন আপনি? এমনি একজন বইয়ের ফেরিওয়ালা, যিনি জীবনের ৬০ বছরের মধ্যে ২১ বছরই ব্যয় করেছেন এই কাজে। তিনি আত্রাই উপজেলার আমরুল কসবা গ্রামের মৃত রমজান আলীর ছেলে লোকমান হোসেন। নব্বইয়ের দশক থেকেই ফেরি করে বই বিলিয়ে যাচ্ছেন সবার মাঝে। সব বয়সের সব পাঠকের হাতেই তিনি তুলে দিতে চান তার পছন্দের বইটি। না, অন্য কোনো আশা কিংবা ইচ্ছা থেকে নয়, লোকমান এই কাজ করেন গ্রামের মানুষকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রেখে বই পড়ার আনন্দ বিলিয়ে দেওয়ার জন্য। কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ এমনকি কৃষক পর্যন্ত তার পাঠক। পিছিয়ে নেই অন্যরাও। বর্তমানে তার পাঠকসংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিনের মতো তার কাজ করে যাচ্ছিলেন লোকমান হোসেন। কাঁধে চিরাচরিত ব্যাগ আর বাইসাইকেলে বাঁধা রয়েছে বেশ কিছু বই। হেঁটে যাওয়ার সময়ই কথা হয় তার সঙ্গে। জানতে চাইলাম তার শুরুর গল্পটা। বই আর পত্র-পত্রিকার সঙ্গে তার সখ্য ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু শখ থাকলেও সাধ্য হতো না। তার গ্রাম তো দূরের কথা, আশপাশের ১০-১২টি গ্রামেও ছিল না কোনো পাঠাগার। নিজ এলাকায় একটি পাঠাগার করা ও বইকে সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন জাগে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস পথে-ঘাটে, হাট-বাজারে, পায়ে হেঁটে ও বাইসাইকেলে করে ২১ বছর ধরে বই বিক্রি করছেন লোকমান হোসেন। সারা জীবন এভাবেই বই পড়া আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান তিনি। গ্রামের মানুষকে দিতে চান আনন্দময় এক জগতের খোঁজ। যে জগতের খোঁজ তিনি পেয়েছিলেন বইয়ের ছাপানো অক্ষরে। সেই আনন্দের ভাগ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিতেই তিনি হাঁটেন মাইলের পর মাইল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর