সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকাজুড়ে ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে

থাকবে ১১টি লাইন, ১ কিলোমিটার অন্তর স্টেশন, যুক্ত হবে নারায়ণগঞ্জ ঝিলমিল জাহাঙ্গীরনগর পূর্বাচল ও টঙ্গী

নিজামুল হক বিপুল

ঢাকাজুড়ে ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে

রাজধানী ঢাকাকে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে নিয়ে আসতে সাবওয়ে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছর জুলাই-আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন এবং নকশা পাওয়া যাবে। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার তলদেশে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে তৈরি করার প্রস্তাব এসেছে। এটি বাস্তবায়নে ৩০ বছর সময় নেওয়া হবে।

প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগ ইতিমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থের সংস্থান করতে কাজ শুরু করেছে। প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে পাঠানোর জন্য। একই সঙ্গে সেতু বিভাগ নিজেরাও অর্থায়নের জন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে বছরে অন্তত একটি সাবওয়ে তৈরির কাজ শুরু করার আশা করছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নগরবাসীর যাতায়াত সহজ করতে সেতু বিভাগ পুরো রাজধানী জুড়ে সাবওয়ে তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে শুরু হয় সাবওয়ে প্রকল্পের সমীক্ষার (ফিজিবিলিটি স্টাডি) কাজ। স্পেনের টিপসা নামের একটি প্রতিষ্ঠান জয়েন্টভেঞ্চারে বাংলাদেশি আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে সমীক্ষা শুরু করে পুরো রাজধানী জুড়ে। ৩১৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ইতিমধ্যে সমীক্ষার একটি প্রাথমিক প্রতিবেদনও হাতে পেয়েছে সেতু বিভাগ। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকার তলদেশে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার সাবওয়ে নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এতে মোট ১১টি লাইন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি লাইন থাকবে ঢাকার পাশের জেলা এবং কয়েকটি এলাকার সঙ্গে কানেকটিং লাইন হিসেবে। এর একটি লাইন কানেকটিং থাকবে নারয়ণগঞ্জের সঙ্গে, একটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে, একটি কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্পের সঙ্গে, একটি থাকবে পূর্বাচলে এবং একটি সংযোগ থাকবে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত। এরপর পর্যায়ক্রমে যুক্ত করা হবে মুন্সীগঞ্জ ও নরসিংদীর আশাপাশের এলাকাও। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী লাইনের নাম চূড়ান্ত না হলেও এখন পর্যন্ত যে ১১টি লাইন পাওয়া গেছে সেগুলোর একেকটির দৈর্ঘ্য ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার। প্রতিটি সাবওয়ে লাইনের এক কিলোমিটার অন্তর অন্তর স্টেশন থাকবে। একই সঙ্গে থাকবে ইন্টারকানেকশন, যাতে সাবওয়েতে চলে যাওয়া নগরবাসী সহজেই এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাতায়াত করতে পারবেন মেট্রো বদলের মাধ্যমে। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে মেট্রোরেলে যে কাজ চলছে সেই কাজের সঙ্গে যাতে সাবওয়ে প্রকল্প সাংঘর্ষিক না হয় সে জন্য সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সমীক্ষা প্রতিবেদন এবং প্রাথমিক নকশা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের যেসব লাইন আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে যাবে সেগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য যেসব জায়গায় কানেকটিং হওয়া দরকার সেসব জায়গায় সাবওয়ে কানেকটিং করা হবে। ইন্টারচেঞ্জও করা হবে। সাবওয়ে প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে সেতু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। কমপক্ষে ৩০ বছর সময় নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে প্রাথমিক সমীক্ষা প্রতিবেদনে সাবওয়ে প্রকল্পের একটি সামগ্রিক চিত্র পাওয়া গেছে। কভিড-১৯-এর কারণে সমীক্ষার কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর জুলাই-আগস্টের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদনের আলোকে আমরা সাবওয়ের প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এই প্রকল্প অনেক ব্যয়বহুল। অনেক অর্থের প্রয়োজন। আমরা প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে ইআরডিতে পাঠাব। তারা চেষ্টা করবেন দাতা সংস্থা বা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলে অর্থের সংস্থান করতে। আমাদের দিক থেকেও আমরা অর্থ সংস্থানের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করব।’ তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার পর যদি আমরা বছরে একটা লাইনের কাজ শুরু করতে পারি, তাহলেও সেটি অনেক বড় কাজ হবে।’

সর্বশেষ খবর