পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৩২তম স্প্যান বসেছে গতকাল সকাল সোয়া ৯টার দিকে। দৃশ্যমান হয়েছে ৪৮০০ মিটার সেতু। এতে করে মূল সেতুর ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি এখন যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান। এদিকে নদী শাসনের অগ্রগতি হয়েছে ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয় স্প্যানটি। এর আগে শনিবার সারা দিন স্প্যানটি বসানোর চেষ্টা করা হয়। তবে এতে বাদ সাধে প্রবল স্রোত আর পলি। যে কারণে শনিবার সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৩২তম স্প্যানটি বসানোর চেষ্টা ব্যাহত হয় বলে জানিয়েছেন পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, শনিবার কাজ এগিয়ে রাখায় রবিবার সকালেই পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ৪ ও ৫ নম্বর পিলারের ওপর সেতুর ৩২তম স্প্যানটি বসানো সম্ভব হয়েছে। এই সেতুর জন্য প্রয়োজন ৪১টি স্প্যান। ইতিমধ্যে ৪১টি স্প্যানেরই মালামাল চীন থেকে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। অনেক আগেই ৩৯টির মালামাল এসেছে। ৩৯টি স্প্যান প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি স্প্যান সেতুর পিলারে বসেছে এবং ৩২তমটি গতকাল পিলারে বসানো হলো। বাকি ৯টির ৭টি স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। পরে ২টি স্প্যানের মালামাল আসায় সে ২টিও প্রস্তুত হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৩তম স্প্যানটি রঙের কাজও শেষ। এখন পিলারে বসানোর জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। এখন আনুষঙ্গিক কাজ (স্টেয়ার/রেল/ব্যালান্স লোড/লিফটিং হুক) করার পর এটি পিলারে এ মাসের মধ্যেই স্থাপন করা হবে। দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প পদ্মা বহুমুখী প্রকল্পের নানামুখী কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। এই সেতুর উভয় পাড়ে সংযোগ সড়ক ও টোল প্লাজার কাজ শেষ। চলছে নদী শাসন, নদী শাসনের জন্য বিপুল পরিমাণ ব্লক তৈরি, ড্রেজিংয়ের কাজসহ বিভিন্ন স্থানে স্লপিংয়ের কাজ। যেদিকে চোখ যায় শুধু কাজ আর কাজ। পদ্মা সেতুর বিশাল এই কর্মযজ্ঞ রাতের আঁধারকেও হার মানায়। কর্মমুখর পদ্মায় ঝড়-বৃষ্টি আর প্রবল স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতু নির্মাণ কাজ। ইতিহাসের সাক্ষী হতে ইতিমধ্যে ৩২টি স্প্যান পিলারে বসে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে মূল কাজের শুভসূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে শুরু হয় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক পথচলা। এরপর একে একে ৩২টি স্প্যান পিলারে বসে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা আর মাত্র ৯টি স্প্যান পিলারে বসিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর শুভ উদ্বোধন। পদ্মা সেতুকে ঘিরে সেতুর দুই পাড়েই সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে। এটি প্রতিষ্ঠিত হলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বদলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক চিত্র।
