ময়মনসিংহ মহানগর, জেলা, ভালুকা থানা ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনে ‘টাকা উড়ছে’ বলে অভিযোগ ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মুখে মুখে। ভালুকায় কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণপ দগুলোতে স্থানীয় বিএনপি নেতারাও আর্থিক লেন-দেনের সঙ্গে জড়িত বলে কেন্দ্রে অভিযোগ এসেছে। ছাত্রদলের মাঠ পর্যায়ের কমিটি গঠনে সারা দেশেই একই চালচিত্র।
জানা যায়, তৃণমূল কমিটি গঠন করতে গিয়ে তৃণমূলে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম ব্যবহার করে পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন। পদ দেওয়ার বিনিময়ে ‘অনৈতিক লেনদেন ও পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতা, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা ও বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে। এ কারণে অনেক ত্যাগী, পরীক্ষিত ও মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীরা কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছেন না। এ নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছে।
সূত্রমতে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় কেন্দ্র গঠিত সাংগঠনিক রিপোর্ট অনুযায়ী আরমান হোসেন লিমন মোড়লকে আহ্বায়ক ও আশরাফুল ইসলাম শুভকে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়। পরে কেন্দ্র গঠিত রিপোর্ট বাদ দিয়ে ‘মাই ম্যান’ রাখতে শুভকে বাদ দিয়ে সদস্য সচিব করা হয় দীর্ঘদিন সৌদি আরব থাকা জহিরুল ইসলাম বাদশাকে। রাজনৈতিক মামলায় শুভ এখন জেলে। স্থানীয় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ছাত্রদলের শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে সাংগঠনিক রিপোর্ট পাল্টে বাদশাকে সদস্য সচিব করেছেন।এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কোনো বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে কারও কারও বিরুদ্ধে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি, তা আমলে নেওয়ার মতো নয়। তবে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যদি কেন্দ্র থেকে কমিটি ঘোষণার অনুরোধ করেন তাহলেই কেবল তা ঘোষণা করা হয়। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলের সাংগঠনিক রিপোর্টে সদস্য সচিব হিসেবে শুভর নাম ছিল। কিন্তু সার্বিক দিক বিবেচনায় বাদশাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুভকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা কমিটি গঠনে অনৈতিক লেনদেনসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন। এ নিয়ে কথা বললে বহিষ্কারেরও হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি কোনো গণমাধ্যমে অনিয়মের বিষয়ে খবর প্রকাশ হলেও তা মিথ্যা বলে কৌশলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বোঝাতে তারা সক্ষম হচ্ছেন। তাকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছেন।
ছাত্রদলকে আরও শক্তিশালী করতে তৃণমূল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি হাইকমান্ড। সে অনুযায়ী সারা দেশের থানা-পৌর, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শাখাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে ১১টি টিম গঠন করেছে সংগঠনটি। ইতিমধ্যে অধিকাংশ ইউনিটে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। একাধিক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জানান, বিভাগীয় টিম প্রধান যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কম। তারা ভালো কাজ করছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা বিভাগীয় টিম প্রধানকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। টিম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জেলা শাখা নেতাদের দেওয়া কমিটি পাল্টে দেওয়ার। চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিমের প্রধান হচ্ছেন সহ-সভাপতি কে এস এম মুসাব্বির সাফি। তার সঙ্গে রয়েছেন সহ-সভাপতি পাবেল শিকদার, যুগ্ম-সম্পাদক এ বি এম মাহমুদ আলম সরদার, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন নিলয়, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ সাব্বির। এ টিমের বিরুদ্ধে বান্দরবান জেলার সভাপতি আশরাফুল আমিন ফরহাদ ও অমিত ভূষণ তঞ্চঙ্গ্যা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার আওতাধীন ১৮টি শাখা কমিটি ঘোষণার পরও অনৈতিক লেনদেন ও ত্যাগীদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কমিটি বাতিলের দাবিতে কক্সবাজার শহরে বিক্ষোভ মিছিলও করে পদবঞ্চিতরা। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় টিম প্রধান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কে এস এম মুসাব্বির সাফি বলেন, এসব সত্য নয়। আমি শতভাগ সততা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। জেলা নেতাদের অভ্যন্তরীণ গ্রুপিংয়ের কারণে কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে। খুলনা বিভাগীয় ছাত্রদলের টিম প্রধানের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন অধিকাংশ জেলার নেতারা। গত ২৫ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন অধিকাংশ জেলার নেতারা। লিখিত অভিযোগে তারা বলেন, বিভাগীয় টিম তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহ-সভাপতির এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। তারা অসৎ ও অনৈতিক উদ্দেশে কাজ করছে। প্রতিটি জেলায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বাইরে আলাদা বলয় তৈরি ও সংশ্লিষ্টদের আগামিতে বড় পদের আশ্বাস দিয়ে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার ছাত্রদল নেতারা বলেন, টিমপ্রধান কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান সজীবের বিরুদ্ধে আমরা দুই পৃষ্ঠার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিয়ে অপসারণের দাবি করেছিলাম। কিন্তু ৬ অক্টোবর ৫টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম পুনর্গঠন করা হলেও তাকে বহালতবিয়তে রাখা হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এ ছাড়াও ফেনীর ফুলগাজী ও দাগনভূঁইয়া, সিলেট, ঝিনাইদহসহ বেশ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করেও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কমিটি বাতিলের দাবিতে এসব এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।