সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

আটকের পর দাবিকৃত টাকা না পেয়ে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। নিহত রায়হান আহমদের পরিবার বলছে, পুলিশি নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

নিহত রায়হান আহমদ (৩৪) সিলেট নগরীর আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার গুলতেরা মঞ্জিলের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি এক সন্তানের জনক। নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. আবদুল গফফারের চেম্বারে তিনি চাকরি করতেন। রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম ও চাচা হাবিবুল্লাহ অভিযোগ করে জানান, চিকিৎসকের চেম্বার থেকে ফিরতে দেরি দেখে গত শনিবার রাত ১০টায় রায়হানের মোবাইলে ফোন দেন মা ও তার স্ত্রী। কিন্তু ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ভোর ৪টা ২৩ মিনিটের দিকে মায়ের মোবাইল ফোনে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে  কল দিয়ে রায়হান জানান, পুলিশ তাকে ধরে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে এসেছে। তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ চাচ্ছে। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিবে। এ কথা শুনে রায়হানের মা তার চাচাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে পাঠান। রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ গতকাল ফজরের সময় টাকা নিয়ে ভাতিজা রায়হানকে ছাড়িয়ে আনতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে যান। এ সময় সাদা পোশাকে ফাঁড়িতে থাকা এক পুলিশ সদস্য বলেন,  ‘আপনার ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসার কথা। আপনি ৫ হাজার টাকা নিয়ে আসলেন কেন? চলে যান, রায়হান এখন ঘুমাচ্ছে এবং যে পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও ফাঁড়িতে নেই। আপনি ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল ৯টার দিকে আসেন। আসলেই তাকে নিয়ে যেতে পারবেন। তাকে আমরা কোর্টে চালান করব না।’ এ কথা শুনে রায়হানের চাচা বাসায় চলে যান এবং পরে সকাল ৯টার দিকে টাকা নিয়ে ফের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান। এ সময় পুলিশ সদস্যরা জানান, অসুস্থ হয়ে পড়ায় সকাল ৭টার দিকে রায়হানকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ খবরে হাবিবুল্লাহ উদ্বিগ্ন হয়ে তৎক্ষণাৎ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন রায়হানের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বিকাল ৩টার দিকে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। ‘পুলিশি নির্যাতনে’ রায়হানের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় লোকজন গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধের পর পুলিশ গিয়ে তাদের শান্ত করে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। এদিকে ‘ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে’ বলে পুলিশ দাবি করলেও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ঘটনাটি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সিলেট কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র জানান, এখনো নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জ্যোর্তিময় সরকার জানান, রায়হানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে পুলিশের কেউ জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর