মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

দেশীয় এনজিওগুলোর দুর্দিন

করোনায় ফান্ড ক্রাইসিস স্থবির হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠিত এনজিওর কার্যক্রম

শফিউল আলম দোলন

একে তো করোনাভাইরাস তার ওপর ‘ফান্ড ক্রাইসিস’। নেই কাজ করার পরিবেশ। সরকারি সহায়তা অত্যন্ত সীমিত। তার মধ্যেও রয়েছে, অনিয়ম-দুর্নীতি, সুষম বণ্টনের অভাব। সব মিলে বর্তমানে দেশীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- এনজিওগুলোর এখন চরম দুর্দিন চলছে। তাদের বেশির ভাগেরই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক নামি-দামি প্রতিষ্ঠিত এনজিওর কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়ছে। এনজিও বিশেষজ্ঞরা তার কারণও ব্যাখ্যা করছেন। কেউ বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণার প্রক্রিয়ায় থাকা বাংলাদেশে ‘বিদেশি ফান্ড’ হ্রাস পাচ্ছে। কেউ বলছেন, মহামারীর কারণে কার্যক্রমের গতি পিছিয়ে পড়ছে। দেশে বর্তমানে ‘এনজিওবান্ধব’ পরিবেশ নেই। সরকারের সহযোগিতাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে দেশীয় এনজিওগুলো বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শ্রেণির এনজিওগুলো সংকটের মুখোমুখি। এমনকি খ্যাতনামা সংস্থাগুলোও সংকটকাল অতিক্রম করছে।   

তবে এ সম্পর্কে এনজিও ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. রাশিদুল ইসলাম ব্যাপক আশাবাদী। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা চ্যালেঞ্জ। তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। বিশেষ উদ্যোগ নিলে ধনী ও উন্নত দেশগুলো থেকে অনেক ফান্ড আনা সম্ভব। বিদেশে আমাদের অ্যাম্বাসিগুলোও সেক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে। এনজিও ব্যুরো সাধারণত চ্যারিটেবল ‘ফান্ড ডিল’ করে থাকে। তারপরও আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘ফান্ড-রিলিজের’ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন রকমের সহযোগিতা দিয়ে প্রস্তুত।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে এসব এনজিও বা স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে বাৎসরিকভাবে একটা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়। এর বাইরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের আর কিছু দেওয়া হয় না। দেওয়ার কোনো পরিকল্পনাও নেই। তারা নিজেদের ফান্ডেই কাজ করে।   

অন্যদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান সময়ে এনজিওদের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। করোনা মহামারীর পাশাপাশি প্রতিকূল পরিস্থিতি ও আর্থিক সংকটের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের দেশ মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাওয়ার ফলে সংগত কারণেই ফান্ড কমে যাচ্ছে। সরকারও যারা কাজ করতে চায়, তাদের সেভাবে সহযোগিতা করছে না। বরং যারা অনুগত তাদের যোগ্যতা ছাড়াই সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটা ট্রাস্টের মতো গঠন করে জেনুইন এনজিওদের সহযোগিতা করতে পারে সরকার। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রস্তাবিত ‘এনজিও নিবন্ধন’ আইন পাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে সরকারকে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা মহামারী ও প্রতিকূল অবস্থার কারণে স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম গতি হারিয়েছে। আর্থিক সংকটে ভুগছে। এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এনজিওগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। সরকারিভাবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা জরুরি। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। সেই কর্মসংস্থানের ধারাটা যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। এ বিষয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) হাওলাদার মো. রকিবুল বারী বলেন, আমাদের দেশের সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণে এনজিওগুলো নিঃসন্দেহে ব্যাপক অবদান রাখছে। সারা দেশে প্রায় বিশ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে তারা। কিন্তু গত ৭ মাসে তারা কিছুই পায়নি। তাদের অবিলম্বে পৃষ্ঠপোষকতা করা দরকার। সরকারিভাবে তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ দিতে হবে।  এদিকে হাতে গোনা কয়েকটি এনজিও ছাড়া করোনা মোকাবিলা, প্রতিরোধে সহায়ক কার্যক্রম পরিচালনায় বড় কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এনজিওর সংখ্যা, আর্থিক পরিমাণ, শাখা প্রভৃতির দিক দিয়ে বিশ্বের এক নম্বর দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি থাকলেও করোনার মতো ভয়াবহ ছোঁয়াচে রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা নেই তাদের মধ্যে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের স্বল্পমূল্যের করোনা শনাক্ত পদ্ধতি উদ্ভাবন, ব্র্যাকের পিপিই ও মাস্ক তৈরির কার্যক্রম, কোস্ট ট্রাস্টসহ স্থানীয় কিছু এনজিওর সীমিত পরিসরে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপের বাইরে আর কিছুই চোখে পড়ছে না। বরং স্বেচ্ছাসের্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম অধিক দৃশ্যমান। অথচ বহু লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকারত্বের সংখ্যা হ্রাসে ভূমিকা রাখছে এই সেক্টর। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ এনজিওর অফিস বন্ধ করে বাসায় বসে থাকা ছাড়া কোনো কার্যক্রম নেই। দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া এনজিওগুলোর হাত গুটিয়ে নেওয়াটা নিঃসন্দেহে হতাশাজনক। কমছে এনজিও সহায়তা, ছাঁটাই হচ্ছে জনবল।

সর্বশেষ খবর