মঙ্গলবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সর্বোচ্চ সংখ্যক পৌরসভায় ইভিএমে নির্বাচন

কিছু পৌরসভায় ব্যালট পেপারে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে তফসিল, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভোট

গোলাম রাব্বানী

আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনে অধিকাংশ পৌরসভায় ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কিছু পৌরসভায় ব্যালট পেপারেও ভোট গ্রহণ করবে ইসি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ভোট গ্রহণ হবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, একই দিনে দেশের ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট করার চিন্তা করছে কমিশন। এক্ষেত্রে ভোট নিয়ে দুই ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি সচিবালয়। প্রথমত. নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষ নাগদ ভোট করা; দ্বিতীয়ত. ডিসেম্বরের শেষে তফসিল দিয়ে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ভোট করার চিন্তা করা হচ্ছে। তবে তফসিল থেকে ভোট অনুষ্ঠান পর্যন্ত ৩৫-৪৫ দিন হাতে রাখবে ইসি। এদিকে দ্রুত পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে পরিষদের প্রথম সভার তারিখ, শপথ গ্রহণের তারিখ, পৌরসভার মেয়াদ শেষের তারিখ ও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা এবং মামলা সংক্রান্ত তথ্য ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ ইসির সচিবালয়ে পাঠিয়েছে। ইসি সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছে। পৌরসভা ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে পৌরসভা নির্বাচন পেছানো হবে না। নীতিগতভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ভোট জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। এর আগে-পরেও হতে পারে। তিনি বলেন, করোনার কারণে এবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা কম। এইচএসসি পরীক্ষা হবে না। সবদিক বিবেচনা করে নির্বাচনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

সর্বোচ্চসংখ্যক পৌরসভায় ইভিএমে ভোট : জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, কমিশন নির্দেশ প্রদান করেছে, সর্বোচ্চসংখ্যক লোকাল (স্থানীয় সরকার নির্বাচন) নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার। সেই অনুযায়ী আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। এটা সবার জন্য ভালো হবে। সাধারণ মানুষের জন্য ভালো হবে। এই মহাপরিচালক বলেন, সর্বমহলে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে। ইভিএমে চাঁদপুর ও কালাই পৌরসভা নির্র্বাচন হলো। ইভিএম নিয়ে একটা কথা কিন্তু নেই। নির্বাচন শেষ হওয়ার ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যে আমরা ভোট কেন্দ্রে  ফলাফল ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি বলে, পৌরসভায় সর্বোচ্চসংখ্যক ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা করছি। তৃণমূলের নির্বাচন (পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে) সংঘাত বেশি হয়। আমরা চাচ্ছি একটা সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন। যাতে কোনো সংঘাত না হয়, হানাহানি না হয়। জীবনের ঝুঁকি কন্ট্রোল করা যায় এবং দ্রুততম সময়ে  ভোট কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণা করার জন্যই ইভিএমে ভোটের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে লোকাল (স্থানীয়) নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা, তা হলো- এখানে সহিংসতা বেশি হয়, মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাইছি সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সুন্দরভাবে, সিস্টেমেটিক ওয়েতে ভোট দেবে। আবার ভোটের পর ফলাফলটাও দ্রুততম সময়ে দেব আমরা। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাচ্ছি। সেই সঙ্গে যারা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকেন তাদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। যাতে সন্ধ্যার আগেই প্রিজাইডিং অফিসারসহ ভোট গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে ফেরত আসতে পারেন। সে জন্য সন্ধ্যার আগেই ফলাফল দেওয়াসহ অন্য সব কাজ শেষ করা হবে।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পৌরসভা আইন অনুযায়ী পৌরসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝির মধ্যে প্রায় আড়াই শতাধিক পৌরসভার মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। সেই হিসাবে নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব পৌরসভায় ভোট করতে হবে। এ জন্য আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে একই দিনে প্রায় আড়াই শতাধিক পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে। সম্প্রতি কমিশনের বৈঠকে পৌরসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে কমিশন নির্দেশনা দিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, দেশে বর্তমানে প্রায় ৩২৪টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর একযোগে ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বছরের ২৪ নভেম্বর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছিল ইসি। ওই সময় তফসিল থেকে ভোট গ্রহণ পর্যন্ত ৩৬ দিন সময় দিয়েছিল কমিশন। এছাড়া অন্য পৌরসভাগুলোর ভোট মেয়াদ অনুযায়ী বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর যে পৌরসভাগুলোর ভোট হয়েছিল তার বেশির ভাগের মেয়র ও কাউন্সিলররা পরের বছর (২০১৬ সাল) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি শপথ নেন। আর ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এসব পৌরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর