বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
হাতিরঝিলের সেই লাশ

পাসপোর্ট সংশোধনের টাকা ফেরত চাওয়ায় খুন হন মেহেদী

নিজস্ব প্রতিবেদক

পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য দেওয়া টাকা ফেরত চাওয়ায় খুন হন চট্টগ্রাম থেকে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম মেহেদী। সংশোধনের জন্য তিনি দালাল চক্রকে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছিলেন। কাজ না হওয়ায় ওই টাকা ফেরত চান মেহেদী। এ খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল এক ব্রিফিংয়ে এসব জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

এর আগে ১২ অক্টোবর সকালে রাজধানীর হাতিরঝিলের মেরুল বাড্ডা প্রান্ত থেকে অজ্ঞাত লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। খানিক দূরে পড়ে থাকা একটি কাগজের টুকরায় একটি ফোন নম্বরের সূত্র ধরে প্রথমে মেহেদীর পরিচয় নিশ্চিত হন তারা। চট্টগ্রামের বাসিন্দা মেহেদী আমেরিকা প্রবাসীর একমাত্র ছেলে। পরে সেই সূত্র ধরে মঙ্গলবার রাতে আহসান, তামিম, আলাউদ্দিন ও রহিমকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে গতকাল আদালতে আহসান ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিনজনকে দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। উপকমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এটি একটি ক্লু-লেস হত্যাকা-। ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে যেন লাশের পরিচয় শনাক্ত করা না যায়, সেজন্য আঙুল বিকৃতকরণের পাশাপাশি মুখম-লও বিকৃত করা হয়। ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, মূলত মেহেদী তিনটি পাসপোর্টের নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য আহসানকে আড়াই লাখ টাকা দেন। কিন্তু কাজ না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে কৌশলে কালক্ষেপণ করতে থাকেন আহসান ও তার সহযোগীরা। পরে টাকার জন্য মেহেদী ঢাকায় এলে তাকে কৌশলে আহসান খিলক্ষেতে নিজ বাসায় ডেকে নিয়ে প্রথমে ঘুমের ওষুধ খাওয়ান। এরপর গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে হাতিরঝিলে ফেলে যান। এ ঘটনায় পাসপোর্ট অফিসের কেউ জড়িত থাকতে পারে বলেও ধারণা করছে পুলিশ। ঘটনার তদন্ত-সংশ্লিষ্ট তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক জানান, খিলক্ষেতের উত্তরপাড়া থেকে আহসান ও তামিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আলাউদ্দিনকে হাতিরঝিলের মহানগর প্রজেক্ট ও রহিমকে গ্রেফতার করা হয় রামপুরা থেকে। আহসানের জন্ম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাউরিয়া গ্রামে। তিনি নিহত মেহেদীর বাল্যবন্ধু। পাঁচ বছর মালয়েশিয়ায় থাকার পর গত বছর ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসেন আহসান। চলতি বছর মার্চে গুলশান-২-এর ‘দ্য গ্রোভ’ রেস্টুরেন্টে ৬৫ হাজার টাকা বেতনে এক্সিকিউটিভ শেফ হিসেবে চাকরি নেন। করোনায় রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেলে আর্থিক সংকটে পড়েন আহসান। তখন স্ত্রীর আত্মীয় আলাউদ্দিনের কাছ থেকে তিনি কিছু টাকা ধার নেন। আলাউদ্দিন পেশায় চালক। তবে তিনি পাসপোর্ট অফিসে দালালি ও পরিবহন পুলের পুরনো গাড়ি কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আহসানকে আলাউদ্দিন টাকা ধার না দিয়ে পাসপোর্ট-সংক্রান্ত কাজ দিতে বলেন। এ কাজে যে টাকা পাওয়া যাবে তা দুজনে ভাগ করে নেবেন বলে কথা হয়। পরে আহসান যোগাযোগ করেন মেহেদীর সঙ্গে। বলেন, পাসপোর্টে সমস্যা-সংক্রান্ত কোনো কাজ থাকলে তিনি সমাধান করে দেবেন। এ কথা জেনে তিনটি পাসপোর্টের নাম ও বয়স সংশোধনের জন্য ১২ আগস্ট ঢাকায় আহসানের কাছে আসেন মেহেদী। এরপর দুজন মহানগর প্রজেক্টে আলাউদ্দিনের বাসায় যান। দুই সপ্তাহে পাসপোর্ট তিনটি সংশোধন করে দেওয়ার শর্তে আলাউদ্দিনকে ১ লাখ ৮০ হাজার এবং আহসানকে ১ লাখ টাকা দেন মেহেদী। আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের এক উচ্চমান সহকারীর মাধ্যমে পাসপোর্ট সংশোধনের কাজ করতেন আলাউদ্দিন। নির্ধারিত সময়ে কাজ করে দিতে না পারায় আহসান ও আলাউদ্দিনের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট তিনটি ফেরত চান মেহেদী। এরপর টাকা ফেরত না পাওয়ায় তাদের অফিসে গিয়ে অভিযোগ করার কথা জানান তিনি। সে ক্ষোভ থেকেই মেহেদীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আহসান ও আলাউদ্দিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর