সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজের হাতছানি সিংড়া জাতীয় উদ্যান

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সবুজের হাতছানি সিংড়া জাতীয় উদ্যান

একসময় বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভয়ারণ্য ছিল গহিন সিংড়া ফরেস্ট। যদিও এখন আর সেই বাঘ, নীল গাই নেই। তবে সুন্দর নিরিবিলি গাছগাছালির মোহনীয় প্রকৃতির নয়নাভিরাম সিংড়া ফরেস্ট এখনো দর্শনাথী-পর্যটকদের দৃষ্টিকে টানে।

এ বনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদী। এই নদীর ওপর আছে একটি আকর্ষণীয় সেতু, যার ওপর দিয়ে শুধু মানুষই পারাপার হতে পারবে, কোনো যানবাহন নয়। পর্যটকরা যদি বনভোজন উৎসব করতে চান আসতে হবে শীতকালে। অন্য সময়ও অনেকে আসেন তবে বনের সবুজময় ভরা যৌবন ও নদীর উচ্ছলতা দেখতে চাইলে আসতে হবে ভরা বর্ষায়।

এই পর্যটন এলাকার সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পর্যটকদের চিত্তবিনোদনের জন্য সরকার এ বনকে ‘সিংড়া জাতীয় উদ্যান’ ঘোষণা করেছে।

প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা এই শালবন তথা জাতীয় উদ্যানটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট। সারি সারি আকাশছোঁয়া দীর্ঘ সুউচ্চ শালগাছের সবুজ আচ্ছাদন পর্যটকদের দূর থেকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে, যা উপেক্ষা করা কঠিন। বনের মধ্য দিয়ে মেঠোপথে একাকী হাঁটতে হাঁটতে এ সময় হয়তো মনে পড়বে সেই পুরনো দিনের গান।

বনে প্রবেশেই শোনা যাবে পাখির কিচিরমিচির শব্দ।  দেখা যাবে তিলাঘুঘু, রাজঘুঘু, কাঠঠোকরা, বুলবুলি, হাঁড়িচাঁচা, শকুনসহ অজস্র পাখি। সিংড়া ফরেস্টে প্রবেশের পর দুই ধারে দেখা যাবে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি গাছ। আর নদীর দুই পারেও সারি সারি বৃক্ষ-গুল্ম টেনে নেবে পর্যটকের মন। শালবনের ভিতরে আগর ও বাঁশ-বেতের বাগানও সবার প্রাণ জুড়াবে। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার শালবন। তবে শাল ছাড়াও জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামারি, আকাশমণি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরীতকীসহ নাম না জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম রয়েছে। এ ছাড়া খরগোশ, শিয়াল, সাপ, বেজি এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও পতঙ্গ দেখতে পাওয়া যাবে এই বনে। বন বিভাগ ইতিমধ্যে এসব প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে কমিটি করেছে।

বনের ভিতর দিয়ে রাস্তার প্রায় শেষ প্রান্তে মিলবে ছোট ছোট মাটির ঘর। ৬০-৭০টি আদিবাসী পরিবার বসবাস করে এখানে। নদীর তীর ধরে বনের মধ্যে কিছুদূর গেলেই চোখে পড়বে আদিবাসী সাঁওতাল রমণ-রমণীদের চাঁই বা জাল দিয়ে নদীর ছোট ছোট মাছধরার চমৎকার দৃশ্য। এ ছাড়া বনের মধ্যে রয়েছে বড় বড় উঁইপোকার মাটি দিয়ে তৈরি ঢিবি, লম্বা লম্বা গিলা লতা। গ্রামীণ আবহে অত্যন্ত কাছ থেকে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা দেখা যাবে এখানে।

ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে মায়াবী হাতছানির এক অনুপম দৃশ্য দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্ট। এর অবস্থান দিনাজপুর শহর থেকে সড়কপথে ৪০ কিমি উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলায়। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব চার কিমি। দিনাজপুর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়কপথে আসা যায় এখানে।

সিংড়া শালবনের বিট কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য এখানে আসেন। বছরের সব সময়ই পর্যটকরা আসেন ভ্রমণে। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য রয়েছে একটি ছোট পরিসরের রেস্টহাউস, দুটি পিকনিক স্পট। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য বিশেষ করে শীত মৌসুমে আসেন এখানে। কথা হয় এখানে বেড়াতে আসা আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারো মাস নর্ত নদীকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশুপার্ক তৈরি, সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ করা হলে এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়লে রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি সিংড়া শালবন হয়ে উঠবে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১০ অক্টোবর বীরগঞ্জের  ভোগনগর ইউপির ৮৫৫.৫০ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে বন বিভাগ।

সর্বশেষ খবর