সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা, প্রতিবাদে বিক্ষোভ অগ্নিসংযোগ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান শুভ্রকে গত শনিবার রাতে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার জের ধরে গতকাল দিনভর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১০টার দিকে পৌর এলাকার পান মহালে চায়ের দোকানে শুভ্র তার সহযোগীদের নিয়ে চা পান করছিলেন। এ সময় দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে ৮-১০ জন দুর্বৃত্ত এসে শুভ্রকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার সঙ্গে থাকা আল আমিন ও জাহাঙ্গীর নামের দুজনকেও জখম করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেলে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভ্রকে মৃত ঘোষণা করেন। বাকী দুজনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলে জানান চিকিৎসক। নিহত শুভ্র পৌরসভার কালিপুর এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে। তিনি আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। 

এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা গৌরীপুর থানা ঘেরাও করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানান। এ অবস্থায় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তার ভাই সৈয়দ তৌফিকুল ইসলামের বাড়িঘর, ছোট ভাই সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম জুয়েলের ফার্ণিচারের দোকান, উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ ও তার ভাই মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন চন্দনের বাসা-বাড়িতেও হামলা ও ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি নান্দাইল স্বেচ্ছাসেবক লীগ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ত্রিশালেও হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

এদিকে ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির (একাংশের) যুগ্ম আহবায়ক রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে ভোরে তারাকান্দা উপজেলার হারিগাছা এলাকা থেকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়াও তারা মইলাকান্দার কাউরাট এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম, মুজিবর ও রাসেলসহ মোট চারজনকে আটক করেছে। থানার ওসি বোরহান উদ্দিন জানান, আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে ওসি বলেন, কি কারণে এ হত্যাকা- ঘটেছে তা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। অধিকতর তদন্ত শেষে হত্যাকা-ের আসল কারণ জানা যাবে। তিনি জানান, উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া র‌্যাবের টহলও রয়েছে।

গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি সোহেল রানা জানান, গত বছর জিয়াউর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে শুভ্রর সঙ্গে চেয়ারম্যান রিয়াদের হাতাহাতি হয়। তখন এ ঘটনাটি বেশি দূর না গড়ালেও এরপর থেকেই রিয়াদ ও শুভ্রর মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়।  অনেকেই মনে করেন জেদ মেটাতেই রিয়াদ তার দলবল নিয়ে শুভ্রর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

জানা গেছে, গতকাল বাদ আছর গৌরীপুর কেন্দ্রিয় ঈদগাহ মাঠে নিহত শুভ্রের জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। জানাযার নামাজে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, সমর্থকসহ স্থানীয় শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

সর্বশেষ খবর