সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
ফাঁড়িতে যুবক খুন

৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম রায়হানের পরিবারের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

সিলেট মহানগরীর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ নামের এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার আট দিন অতিবাহিত হলেও এখনো গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত কোনো পুলিশ সদস্য। ঘটনার পর থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরও গা ঢাকা দিয়েছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই পুলিশের কাছে। এ অবস্থায় নিহত রায়হানের পরিবার ও এলাকাবাসী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতারে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছে। অন্যথায় হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও হুমকি দিয়েছে তারা। গতকাল বেলা সাড়ে ১২টার সময় নগরীর আখালিয়া নেহারীপাড়ায় রায়হানের বাসায় এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রায়হান আহমদ নেহারীপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বক্তব্য রাখেন রায়হানের মা সালমা বেগম। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রায়হানের মামাতো ভাই শওকত হোসেন।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মামলার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত সব পুলিশ সদস্যকে দ্রুত গ্রেফতার এবং এ ব্যাপারে আইজিপির নির্দেশনা প্রদান; হত্যাকান্ডের ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য প্রদান ও নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান।

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রায়হান হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের গ্রেফতার করা না হলে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে হরতাল-অবরোধসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ১১ অক্টোবর ভোরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রায়হান আহমদকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এসআই আশেকে এলাহী। ঘণ্টাখানেক পর সকাল ৭টা ৫০ মিনিটের দিকে হাসপাতালে মারা যান রায়হান। শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে মৃত্যুর অভিযোগ তুলে মামলা করলে সিলেট মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি রায়হানের মৃত্যুর জন্য ফাঁড়ি পুলিশের দায়িত্বহীনতার প্রমাণ পেলে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে পুলিশ হেডকোয়ার্টারসের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়। হত্যাকা-ের পরদিন থেকে পলাতক রয়েছেন প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন।

এদিকে কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের পর রায়হানের শরীরে গুরুতর আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শামসুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শারীরিক নির্যাতনেই রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়নাতদন্তে রায়হানের শরীরে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪টি গুরুতর। এ ছাড়া ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ও বাঁ হাতের অনামিকার নখ ছিল ওপড়ানো। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রায়হানের পিঠ, দুই ঊরু, দুই হাঁটুর জয়েন্ট, দুই কব্জির জয়েন্ট, পায়ের গোড়ালি, পায়ের পাতা ও দুই বাহুর চারপাশে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বিশেষ করে দুই হাতের কব্জিতে চারটি, ডান পায়ের সামনের দিকে দুটি, পেছনের দিকে তিনটি, বাঁ পায়ের সামনের দিকে দুটি ও ডান পায়ের গোড়ালিতে তিনটি গুরুতর জখম ছিল। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপি-, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো অকার্যকর হয়ে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

সর্বশেষ খবর