মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

নির্বাচন প্রক্রিয়া ধসে গেছে

-শারমিন মুরশিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্বাচন প্রক্রিয়া ধসে গেছে

নির্বাচন বিশ্লেষক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেছেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া ধসে গেছে। মানুষ ভোট প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারিয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করে না, নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবে। ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। এসব কারণেই মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না।’ সদ্য সমাপ্ত ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি এবং ভোটের প্রতি মানুষের অনাগ্রহের বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ১০ ভাগ মানুষ ভোট দিয়েছেন। যিনি নির্বাচিত হয়েছেন, তিনি ৯০ শতাংশ মানুষের মতের বিরুদ্ধে এসেছেন। ১০ শতাংশ মানুষের ভোটে এসেছেন। তাকে কি আমরা বলব গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সদস্য? এটা কি বলা যায়? অথবা গণতন্ত্র বলতে আমরা যদি বুঝে থাকি অধিকাংশের রায়, এটা কি তাহলে অধিকাংশের রায় হলো?’ তিনি বলেন, ‘এমন একটি নির্বাচন হয়ে গেল, যেখানে সংসদীয় আসনের ৯০ শতাংশ মানুষ মতই দিল না। এতে জনগণের মত প্রকাশিত হলো না। তাহলে আমরা কেমন করে বলব এটি একটি গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত!’ অনেকগুলো কারণে নির্বাচন কমিশনের আবার নতুন করে এই উপনির্বাচন করা উচিত বলে মনে করেন এই নির্বাচন-বিশ্লেষক। তিনি বলেন, পৃথিবীজুড়ে একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছে। খুব কম মানুষ যদি ভোট দিতে যায়, তবে সেই নির্বাচনটা বাতিল হয় এবং আবারও নির্বাচন করা হয়। শারমিন মুরশিদ বলেন, ‘এ দেশের মানুষ রাজনৈতিক ওঠানামার মধ্যেও কিন্তু ভোট দিতে যায়। নির্বাচনে গ্রামবাংলার মানুষ, শহরের মানুষ ভোট দিতে যায়। সেই মানুষগুলোকে আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে এলাম কী করে। যে নির্বাচন হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না, এটা কিন্তু একটা বিস্ময়কর ব্যাপার। সেই অবস্থা থেকে এ অবস্থায় পৌঁছানোর মাঝখানে একটা আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেই পরিবর্তন একটা বিষয় মানুষের কাছে পরিষ্কার করেছে, তা হলো, ভোট দিতে গেলে তিনি হয়রানির শিকার হবেন, তিনি নিজের মতো করে ভোট দিতে পারবেন না এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। অর্থাৎ তিনি ভাবেন যে আমি কেন ভোট দিতে যাব!’ তিনি বলেন, ‘এতে শুধু আমাদের ভোটাধিকার হরণ হচ্ছে তা-ই নয়। রাইট অব এক্সপ্রেশন, মাই রাইট অব চয়েজ- এই সবটুকু আমি হারাচ্ছি। এটা হারানোর মধ্য দিয়ে আমি আমার একটা মৌলিক নাগরিক অধিকার হারিয়ে ফেলছি।’ এই নির্বাচন-বিশ্লেষক বলেন, ‘ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আমাদের শূন্য থেকে আবার শুরু করতে হবে। এই শূন্য থেকে শুরু করার জন্য যে মানসিক শক্তি লাগে, যে রাজনৈতিক ইচ্ছা লাগে, সেটা আমাদের এ মুহূর্তে নেই এবং সেটা নির্বাচন কমিশনের আদৌ নেই। এটা খুব দ্রুত পরিবর্তন হতে যাচ্ছে না। নির্বাচন প্রক্রিয়াটা ধসে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কথা বলেই আসছি। কিন্তু কেন যেন কথাটা কারও কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর