বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বিধিমালায় আটকা বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট

বিধিমালাটি অনুমোদন পেলে সরকারি সব দফতর, অধিদফতর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করাতে পারবে

আনিস রহমান

বিধিমালা না হওয়ায় দুই বছরেও ডোপ টেস্টের উদ্যোগ আলোর মুখ দেখেনি। যদিও সরকারি চাকরিতে যোগদানের আগে ডোপ টেস্ট হচ্ছে। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় বিধিমালা না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করা যাচ্ছে না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ সূত্র বলছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে খসড়া বিধিমালা তৈরি করে দেওয়ার পর সেটি ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বর্তমানে বিধিমালাটি সেখানেই রয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের পাস হওয়া মাদকদ্রব্য আইনের ৬৮(৩) ধারায় ডোপ টেস্ট করার জন্য বিধিমালা প্রণয়নের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। ওই আইনের আলোকেই একটি বিধিমালা প্রণয়নের জন্য তৈরি করে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই বিধিমালার ভেটিং সম্পন্ন হয়নি। বিধিমালাটি অনুমোদন পেলে সরকারি সব দফতর, অধিদফতর, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করাতে পারবে। এমনকি সরকারি বা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান, দফতর বা, সংস্থার কোনো ব্যক্তির আচরণ নিয়ে সন্দেহ হলে ওই দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ডোপ টেস্ট করানোর জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে অনুরোধ করতে পারবেন। এর বাইরে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় চাইলে বিদেশগামী শ্রমিকদের ডোপ টেস্টও বাধ্যতামূলক করতে পারবে। তারা যে কোনো সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে দিয়ে এই টেস্ট করাতে পারবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রজন্মকে বিশেষ করে স্কুল. কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাদক থেকে রক্ষা এবং সড়ক দুর্ঘটনার লাগাম টানতে সরকার ডোপ টেস্টের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এটিকে মাথায় রেখেই ভ্রাম্যমাণ ল্যাবে ডোপ টেস্টের বিষয়টি বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও সড়কে ডিএনসির পরিদর্শক, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই/সার্জেন্ট) এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডোপ টেস্টের নির্দেশ দিতে পারবেন।

বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কারণে ডোপ টেস্টে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে তার মূল কারণ হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মাদক সেবনের বিষয়টি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) শতাধিক সন্দেহভাজন পুলিশ সদস্যের ডোপ টেস্ট করে মাদকাসক্ত হিসেবে শনাক্ত ৪০ জনকে চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। পুলিশপ্রধানও মাদকাসক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এ অবস্থায় ডোপ টেস্ট বিধিমালা দ্রুত অনুমোদন পেলে পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি, দফতর, অধিদফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডোপ টেস্ট করাতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে নয়, মাদক আইন অনুযায়ী সব জায়গায় ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা গেলে মাদক প্রতিরোধে সফলতা আসবে। বিশেষ করে, স্কুল,কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গাড়ি চালকসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটবে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টকে বাধ্যতামূলক করা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র বলছে, মাদক আইনে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক রাখা হয়েছে মূলত শিক্ষার্থী ও গাড়ি চালকদের কথা চিন্তা করেই। এখন বিধিমালা অনুমোদন পেলে ডোপ টেস্ট করার কাজ সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডোপ টেস্ট বাস্তবায়নে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ডিজির নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন। এই কমিটির নির্দেশনায় সব প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ল্যাবে বা স্বাস্থ্য বিভাগের ল্যাবে ডোপ টেস্ট করতে পারবে। প্রস্তাবিত বিধিমালা অনুযায়ী, মাদকের মামলায় যে কোনো সংস্থার তদন্ত কর্মকর্তা ডোপ টেস্টের নির্দেশ দিতে পারবেন। এ ছাড়া পথে-ঘাটে সন্দেহ হলে গাড়ি চালক, শিক্ষার্থীসহ সন্দেহভাজনদের ডোপ টেস্টের নির্দেশ দিতে পারবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক, পুলিশের এসআই বা সার্জেন্ট। যে কোনো সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি ডোপ টেস্টের নির্দেশ দিতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিতে পারবে। বিদেশে কর্মী যাওয়ার সময় কর্মসংস্থান ব্যুরো এই নির্দেশ দিতে পারবে। সূত্র জানায়, ডোপ টেস্টের জন্য ১০২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মাদকাসক্ত শনাক্তকরণে ডোপ টেস্ট প্রবর্তন শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রাথমিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ২১ জেলায় ডোপ টেস্ট করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এজন্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পটুয়াখালী, বরিশাল, খুলনা, পাবনা, সিলেট, কুমিল্লা, নোয়াখালী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, যশোর ও নরসিংদী জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির পাশাপাশি মিনিল্যাব বসানো হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর