বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাবনায় যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে কৃষক অপহরণের অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি

বিলের পানিতে মাছ ধরায় পাবনার সাঁথিয়ায় উপজেলা যুবলীগ সভাপতির বিরুদ্ধে এক কৃষককে অপহরণ করে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী পরিবারের আভিযোগ, থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। সন্ত্রাসীদের হুমকিতে গ্রামের বাইরে আসতেই ভয় পাচ্ছেন গ্রামবাসীরা।

সরেজমিনে সাঁথিয়া উপজেলার হাঁড়িয়াকাহন গ্রামের সোনাই বিলে গিয়ে দেখা যায় বর্ষার পানিতে ডুবে আছে বিলের মাঠ। গত কয়েক বছর ধরে গ্রামটির দরিদ্র চাষিদের মনে শান্তি নেই। মৎস্যজীবী কালিপদ হালদারের নামে ইজারা নিয়ে বিলটি উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল দখলে নেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। নিজ মালিকানা জমিতে মাছ ধরলেও টুটুল বাহিনীর রোষানলে পড়তে হয় তাদের। হাঁড়িয়াকাহন গ্রামের কৃষক মো. মনসুর আলী বলেন, বন্যার পানির কারণে আমরা গত চার থেকে পাঁচ মাস ধরে আমাদের জমিতে চাষ করতে পারি না। এখন বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় মাঠে মাছ ধরার জন্য জাল পেতেছিলাম। কিন্তু যুবলীগের লোকেরা জলাশয়টি দখলে নেওয়ার কারণে মাছ ধরতে বাধা দেয়। গ্রামের বাসিন্দা ও বিলের জমির মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছ ধরতে গেলেই টুটুলের শ্বশুর বাবুল হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাদের জাল নষ্ট করে দেয়। তাদের হুমকির কারণে আমরা নিজস্ব জমিতে যাওয়ারও সাহস পাই না।

সম্প্রতি, টুটুলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নিজের জমিতে মাছ ধরেন কৃষক মাসুদ হোসেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে টুটুলের সন্ত্রাসী বাহিনী অস্ত্রের মুখে সাঁথিয়া হাট থেকে মাসুদকে তুলে নিয়ে রাতভর নির্যাতনের পর বাজারে ফেলে দিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাঁথিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে টালবাহানা করছে।

ভুক্তভোগী মাসুদ বলেন, গত ১৯ অক্টোবর সাঁথিয়া পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে থেকে চককোনাবাড়িয়া গ্রামের ফজর আলী কসাইয়ের ছেলে আজিজল, নন্দনপুরের বক্কার পীরের ছেলে আশরাফুল আলম ও বাবুল হোসেন, তেঁথুলিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে মতিউর রহমান, আবদুল মতিনের ছেলে শাকিল হোসেন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যায় আশরাফুল আলমের ডিশ লাইন অফিস ঘরে। সেখানে তারা মারপিট করে আমার কাছ থেকে ৫৭ হাজার ২০০ টাকা কেড়ে নিয়ে আটকে রাখে। এরপর সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি টুটুলের তেঁথুলিয়া গ্রামের বাড়িতে নিয়ে টুটুলসহ সবাই মিলে মারপিট করে। থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে বারবার ঘুরাচ্ছে পুলিশ।

তবে, যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নন্দনপুর গ্রামের কালীপদ হালদার, সুনীল হালদার এবং গ্রামের কয়েকজন জেলে জলাশয়ের খালটি ইজারা নেয়। আমি গ্রামবাসীকে বাধা দিচ্ছি না। মাসুদ রানাকে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে টুটুল বলেন, আমি কাউকে অপহরণ কিংবা নির্যাতন করিনি। বরং যারা তুলে এনেছিল তাদের বুঝিয়ে মাসুদকে উদ্ধার করেছি। সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, বিষয়টি লিখিত অভিযোগ হিসেবে পেয়েছি। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন। অভিযোগ আমলে নিতে আমরা কোনো গাফিলতি করিনি। সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম জামাল আহমেদ বলেন, কারও নিজস্ব জমিতে মাছ ধরতে বাধা দেওয়া বেআইনি। আধিপত্যের জোরে সোনাই বিলে একটি মহল এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি। উল্লেখ্য, সাঁথিয়া উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আশরাফুল আলম টুটুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সরকারি জমি দখল, বাড়ি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকুর ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর