বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা
সিআইডির প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে

অনলাইনে অপরাধ ঠেকাতে সাইবার পুলিশ স্টেশন

মাহবুব মমতাজী

দিন দিন বাড়ছে সাইবার অপরাধ। অনলাইনে এসব অপরাধ ঠেকাতে থানাকে নির্ভর করতে হয় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে থাকা সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধ টিমের ওপর। এতে নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সাইবার পুলিশ স্টেশন বা সাইবার থানা করার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হ্যাকিং, অনলাইন প্রতারণা, অনলাইন জুয়া, ক্রিপ্টো-কারেন্সি, সাইবার টেররিজম, পর্নোগ্রাফি ও চাইল্ড পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, গুগল, স্কাইপিতে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ও ব্লগে মিথ্যা মানহানিকর তথ্য প্রচার, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও আপলোড এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতারণার ঘটনাগুলোই মোটা দাগে সাইবার অপরাধ হিসেবে পরিচিত।

সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে সাইবার অপরাধ দমনে ৩৪২ জন জনবল নিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় সাইবার পুলিশ সেন্টার। ওই বছরই রাজধানী ঢাকায় একজন পুলিশ সুপারের অধীনে একটি সাইবার পুলিশ স্টেশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এর আগে সাইবার অপরাধের ব্যাপকতা বিবেচনায় সরকার ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই ঢাকায় একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে।

সিআইডির সাইবার পুলিশ স্টেশন প্রস্তাবনায় বলা হয়, বর্তমানে সিআইডি শিডিউলভুক্ত যে কোনো মামলা দেশের যে কোনো থানায় হলেও তা অধিগ্রহণ ও তদন্ত করতে পারে। সাইবার পুলিশ স্টেশন একইভাবে সরাসরি সাইবার-সংক্রান্ত মামলা করার পাশাপাশি বাংলাদেশের যে কোনো থানায় হওয়া সাইবার-সংক্রান্ত অপরাধের মামলা অধিগ্রহণ ও তদন্ত করতে পারবে। সাইবার পুলিশ স্টেশনে ভুক্তভোগীর সহজেই সেবা প্রাপ্তির সুযোগ হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত থানা ব্যবস্থার বাইরে গিয়ে বিশেষায়িত সাইবার পুলিশ স্টেশনের ধারণা নতুন হলেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর প্রচলন আছে। প্রস্তাবনায় ১৬০ জন জনবল ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একজন পুলিশ সুপার, দুজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, আটজন সহকারী পুলিশ সুপার, ২৫ জন পরিদর্শক, ৭০ জন এসআই, ১৬ জন এএসআই, ৩৬ জন কনস্টেবল, একজন অফিস সহকারী ও একজন সুইপার।

সিআইডির এএসপি (মিডিয়া) জিসানুল হক এ প্রতিবেদককে জানান, সাইবার পুলিশ স্টেশন অচিরেই গঠন করা হবে। এই পুলিশ স্টেশন গঠনের প্রস্তাবের ফাইল মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেখানে অনুমোদন হলেই ঢাকায় সিআইডির তত্ত্বাবধানে এটি চালু করা হবে। সিআইডি সূত্রে পাওয়া গত চার বছরের সাইবার-সংক্রান্ত মামলার পরিসংখ্যানে তুলে ধরা হয়েছে, ২০১৭ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে ৬২৯টি। আসামির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৬৪ জন। গ্রেফতার হয়েছে ৪৬০ জন। পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ২২০টি। আসামির সংখ্যা ৫৬৪ জন। গ্রেফতার হয় ৩০৮ জন। ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে ৪৪২টি। আসামির সংখ্যা ৯৭৯ জন। গ্রেফতার হয়েছে ৩৮৯ জন। পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ২৭৭টি। আসামির সংখ্যা ৭০৮ জন। গ্রেফতার হয়েছে ৪৫৫ জন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ১২৬টি। আসামির সংখ্যা ছিল ৪৭৪ জন। গ্রেফতার হয়েছে ১২৬ জন। ২০১৯ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে ৭টি। আসামির সংখ্যা ১১ জন। গ্রেফতার হয় সাতজন। পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ৪১১টি। আসামির সংখ্যা ৭৬৬ জন। গ্রেফতার হয় ৩৮২ জন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৭৩২টি। আসামির সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৭৫ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার হয় ৬০৭ জন। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত শুধু পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা হয়েছে ২১৭টি। আসামি ৩৯১ জন এবং গ্রেফতার হয় ১৭১ জন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে ৬০৯টি। আসামির সংখ্যা ১ হাজার ২৮৬ জন এবং গ্রেফতার হয়েছে ৫৪৪ জন। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, দেশে সাধারণত ১৩ ধরনের সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে আছে- পারিবারিক বিদ্বেষ সৃষ্টি, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে বিরোধ তৈরি, উগ্র ও বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য প্রচার, ইউটিউবে অন্তরঙ্গ ভিডিও ও ছবি আপলোড, ফেক অ্যাকাউন্ট তৈরি, পাসওয়ার্ড বা গোপন নম্বর অনুমান করে আইডি হ্যাক, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, অনলাইন এমএলএম (মাল্টি লেভেল মার্কেটিং), অনলাইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া)। এসব অভিযোগে পুলিশ সদর দফতরের ল’ফুল ইন্টারসেপশন সেল (এলআইসি), ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল (সিসিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি) সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ, অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাবের সাইবার অপরাধ তদন্তবিষয়ক সেল, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সাইবার হেল্প ডেস্ক কাজ করে।

পুলিশের ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিডিএমএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাইবার অপরাধের ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় ৩ হাজার ৬৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৫৭৫টি মামলা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গেছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৫২২টি। মাত্র ২৫টি মামলায় আসামিদের সাজা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর