রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে মহাপরিকল্পনা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

টানা দুই বছর পিঁয়াজ নিয়ে সংকট তৈরির পর এবার পণ্যটির উৎপাদন বাড়াতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার, যেটি সমন্বয় করছে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়। এই পরিকল্পনায় বর্ষা মৌসুমে পিঁয়াজ উৎপাদনের পাশাপাশি অধিক পরিমাণ জমিতে পণ্যটি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ থাকছে। সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, সরকারের এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাণিজ্য ও কৃষি এই দুই মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ সভা হওয়ার কথা রয়েছে আজ সচিবালয়ে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক উভয়েই এই সভায় উপস্থিত থাকবেন। সভাটি অনুষ্ঠিত হবে বাণিজ্য  মন্ত্রণালয়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পিঁয়াজ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। এগুলো হচ্ছে- (১) বর্ষা মৌসুমে জুলাই-আগস্ট মাসে পণ্যটি উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া; (২) উচ্চ ফলনশীল পিঁয়াজ উৎপাদনে গুণগত মান সম্পন্ন বীজ সরবরাহ করা; (৩) চাষের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং (৪) কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সহজশর্তে ঋণ দেওয়া।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য সচিব পিঁয়াজের উৎপাদন বেশি হয় এমন চার জেলা সফর করেন। ওই সফরে কৃষকদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে আলোচনা করে যে তথ্য পেয়েছেন সে বিষয়গুলো এই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বর্ষা মৌসুমেও চাষ হবে পিঁয়াজ : বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী জানান, সারা বছর উৎপাদিত হয় ‘বারি-৫’ নামে একটি উচ্চ ফলনশীল জাতের পিঁয়াজের জাত আবিষ্কার করেছে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এই জাতের পিঁয়াজটি জুলাই-আগস্ট মৌসুমে উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি দেশের বর্ষা মৌসুম। আমরা দেখেছি দেশের ৩২টি জেলা বন্যাপ্রবণ; এ ছাড়া কম বন্যা হয় ১০টি জেলায়। এই ৪২টি জেলা বাদে বাকি জেলাগুলোর উঁচু জমিতে এই জাতের পিঁয়াজ চাষ করা যেতে পারে। এর ফলে মুড়িকাটা পিঁয়াজ আসার আগে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত যে সংকট সৃষ্টি হয় সেটি মোকাবিলা করা যাবে। পণ্যটির উৎপাদনও বাড়বে।

৫ জেলাতে ১৯ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্য : যে সাতটি জেলায় দেশি পিঁয়াজের সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় সেই জেলাগুলোকে চিহ্নিত করে এরই মধ্যে আগামী মৌসুমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গত মৌসুমে যে পরিমাণ পিঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে তারচেয়ে গড়ে ১০ শতাংশ জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করে পণ্যটি উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী ২০-২১ মৌসুমে ফরিদপুর, পাবনা, রাজবাড়ী, রাজশাহী এবং কুষ্টিয়া এই পাঁচ জেলা থেকে প্রায় ১৯ লাখ মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর থেকে হালি ও মুড়িকাটা মিলিয়ে ৫ লাখ ২২ হাজার মেট্রিক টন, পাবনা থেকে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৪১০ মেট্রিক টন, রাজবাড়ী থেকে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮০ মেট্রিক টন, রাজশাহী থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন, কুষ্টিয়া থেকে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই পাঁচটি জেলায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে মোট ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন পিঁয়াজ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া নাটোর ও শরীয়তপুর থেকে আরও প্রায় ৭০ হাজার মেট্রিক টন পণ্যটি উৎপাদনের লক্ষ্য রয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশে বার্ষিক পিঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ মেট্রিক টন। ফলে পাঁচটি জেলা থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হলে সংকট মোকাবিলা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সরকারের সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর