সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কূটনৈতিক বন্ড সুবিধায় যত অনিয়ম

অপব্যবহার বন্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি মিশনগুলোর সহায়তা চায় কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট

রুহুল আমিন রাসেল

কূটনৈতিক বন্ড সুবিধায় যত অনিয়ম

কূটনৈতিক বন্ড সুবিধায় অনিয়ম থামছে না। এ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিক। তারা বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধার পণ্যসামগ্রী কালোবাজারে বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে গড়ে উঠেছে একাধিক দালাল চক্র। এই দালালরা কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে শুল্কমুক্ত সুবিধার কোটি কোটি টাকার পণ্য কালোবাজারে বিক্রি করছেন। দালাল ও কূটনীতিকদের এই পার্টনারশিপ ওপেন সিক্রেট। ফলে প্রাপ্যতার অপব্যবহারের আড়ালে বড় অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য হওয়ার তথ্য দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র।

জানা গেছে, কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের প্রাপ্যতার বিষয়ে দিকনির্দেশনা চেয়ে গত ৬ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে পত্র দিয়েছেন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন। পত্রে তিনি প্রাপ্যতার অপব্যবহার ও কিছু আইনি জটিলতা এড়াতে এনবিআরের নির্দেশনা চেয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্যতা নিয়ে কয়েকটি কূটনৈতিক বন্ডেড ওয়্যারহাউসের বার্ষিক প্রাপ্যতার অব্যাহত আদেশের কার্যকারিতা রহিত ও সুনির্দিষ্টকরণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়েছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কূটনৈতিক বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ধরা কাস্টমসের জন্য খুব কঠিন কাজ। এক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশি মিশন এবং জাতিসংঘ অধিভুক্ত সংস্থাগুলোর সহায়তা দরকার। প্রাপ্যতা নির্ধারণের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ এবং আরও নজরদারি ব্যবস্থাপনা দরকার। আর যেসব মামলা সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে, তা সমাধানে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কাজ করছে।

কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র জানায়, কয়েকটি দেশের কূটনীতিক নিজের পাসপোর্ট ব্যবহার করে এবং বন্ড সুবিধার পাস বুক দালালদের কাছে সরবরাহ করে কমিশন বাণিজ্য করছেন। তারা প্রকৃত অর্থে তাদের নামে বরাদ্দ হওয়া বন্ড সুবিধার মদ ও মদ জাতীয় পণ্য এবং তামাক জাতীয় পণ্যের ভোক্তা নন। কিন্তু ভোক্তার সুবিধা নিয়ে তা কালোবাজারে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ গ্রহণ করছেন। এতে কূটনীতিকদের বন্ড সুবিধা প্রাপ্যতার অপব্যবহার হচ্ছে। অনেক সময় কূটনৈতিক বন্ড লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠান ও সেখানে থাকা দালালদের কাছ থেকে এই সুবিধা নেন। বিনিময়ে বার ও এর বাইরে এসব শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধার মদ ও মদ জাতীয় পণ্য এবং তামাক জাতীয় পণ্য বিক্রি করছেন। এক্ষেত্রে গড়ে উঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট। আবার তাদের এ সংক্রান্ত কাগজপত্র হালনাগাদও থাকছে। এক্ষেত্রে আইনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না কাস্টমস কর্মকর্তারা।  জানা গেছে, কূটনৈতিক বন্ড সুবিধা হলো- কূটনীতিক ও বিশেষ সুবিধাভোগী বিদেশি নাগরিকদের কেনা পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদান। যাকে বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা বলা হয়। এই সুবিধার আওতায় আমদানি হওয়া পণ্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে বন্ড লাইসেন্স পাওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্রি করছে। কূটনৈতিক এলাকায় স্থাপিত এই বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিক ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যরা শুল্কমুক্ত পণ্য বৈদেশিক মুদ্রা বা টাকায় কিনতে পারেন। কূটনৈতিক বন্ড লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মদ ও মদ জাতীয় পণ্য, তামাক পণ্যসহ কিছু পণ্য বিক্রি করছে। কূটনীতিক ছাড়াও বিশেষ সুবিধাভোগী বিদেশি নাগরিক, যারা বাংলাদেশে অবস্থানরত বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাক-এডিবি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-আইডিবির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত। এর সঙ্গে রয়েছেন উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থা এবং দূতাবাসগুলোতে কর্মরত বিদেশি নাগরিকরা। জানা গেছে, কূটনৈতিক বন্ড সুবিধা নিতে কাস্টমস বন্ড কমিশনারে আবেদন করে পাস বুক গ্রহণ করেন কূটনীতিক ও বিদেশিরা। তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পাসপোর্ট, সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানের সনদ এবং অবস্থানের মেয়াদ বিবেচনা করে পাস বুক নবায়ন করা হয়। প্রতিবার পণ্য ক্রয়ে পাস বুকে এন্ট্রি দিয়ে কিনতে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর