সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সড়কবাতি পোড়ানোর পরিকল্পনায় রাসিকের দুই প্রকৌশলী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে সড়কবাতি নিয়মিত পোড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন দুই প্রকৌশলী। তাদের পরিকল্পনা মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়ন করেন রাসিকের বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারীরা। এই অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে, তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে উঠে এসেছে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসানের পরিকল্পনায় দীর্ঘদিন ধরে সড়কবাতি পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারী মিজানুর রহমান শাহীন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি বলেন, সড়কবাতি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশনা দেন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসান। এরপর পিবিআই শফিকুল হাসানকে গ্রেফতার করে। তিনি ১৭ সেপ্টেম্বর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে দেওয়া ওই জবানবন্দিতে তিনি বলেন, পরিকল্পনাটি করেছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ। ২১ অক্টোবর কর্মচারী মো. ইব্রাহিমের দেওয়া জবানবন্দিতেও আছে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদের নাম।  

রাসিক সূত্র জানায়, আলো ঝলমলে শহর হঠাৎই অন্ধকার। রহস্যজনকভাবে পুড়ে যাচ্ছিল সড়কবাতি। গত এক বছরে কোটি টাকার সড়কবাতি পুড়ে গেছে। এরপর টনক নড়েছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের। এ নিয়ে মামলাও হয়েছে। সিটি করপোরেশনের একজন প্রকৌশলী ও কর্মচারীকে গ্রেফতার করে পিবিআই। দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক শাখার কয়েকজন ‘ষড়যন্ত্র’ করে মেয়রকে বেকায়দায় ফেলতে সড়কবাতি পোড়ানোর কাজটি করে আসছিলেন বলে তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংস্থা। রাতের ঝলমলে আলোয় আলোকিত কিছু এলাকায় হঠাৎ করেই সড়কবাতি পুড়ে যেত। নানাভাবে তৎপরতা চালিয়েও এটি রুখতে পারছিল না সিটি করপোরেশন। এরপরই মামলার সিদ্ধান্ত নেন মেয়র। সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, যেসব বাতি পুড়ে যাচ্ছিল, সেগুলো মনে হয়েছে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পুড়িয়ে দিচ্ছে। দেখে মনে হয়েছে, কেউ গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়েছে। বারবার সড়কবাতি পুড়ে যাওয়ার ঘটনাটি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। এ কারণে মামলার সিদ্ধান্ত হয়। ইতিমধ্যে তদন্ত সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। আমাদের বিদ্যুৎ শাখার দুজনকে গ্রেফতারও করেছে। গত এক বছরে কোটি টাকার সড়কবাতি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নষ্ট হয়েছে কিছুদিন আগেই বসানো হাই-মাস্ক লাইট। মামলার পরই এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় বৈদ্যুতিক শাখার কর্মচারী শাহীন।

 বুধবার উপ-সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল হাসানকে গ্রেফতার করে পিবিআই। এরপরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে অপকর্মের নেপথ্য কুশীলবদের নাম। সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী খন্দকার খায়রুল বাশার জানান, দীর্ঘ সময় ধরে সড়কবাতি পুড়ে যাওয়ার কারণ খুঁজতে তারা লাইট বুয়েটে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সেখান থেকে পাঠানো যে ফলাফল তারা পেয়েছেন, তাতে অতিরিক্ত ভোল্টেজের কারণে এতদিন লাইটগুলো পুড়ে। ফলে তারা এখন নিশ্চিত, ইচ্ছাকৃতভাবে ভোল্টেজ বাড়িয়ে সেটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য সম্পর্কে রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। পরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন।

সর্বশেষ খবর