বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাঁচ সাগরের জেলা দিনাজপুর

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পাঁচ সাগরের জেলা দিনাজপুর

পাঁচ সাগরের জেলা দিনাজপুর। এখানে রয়েছে পাঁচটি দিঘি। জেলা শহরের কিছু দূরে হলেও এসব দিঘির রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য। সাগর নয়, তবু সাগর নামেই পরিচিত। দিঘিগুলো হলো- রামসাগর, সুখসাগর, মাতাসাগর, আনন্দ সাগর ও জুলুম সাগর। রামসাগর : নাম তার রামসাগর। মধ্যযুগের বিখ্যাত সামন্ত রাজার অমর কীর্তি রামসাগর ঐতিহাসিক দিঘি। মহারাজাদের কীর্তিময় এ দিঘির অবস্থান দিনাজপুর শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে। চারদিকে সুউচ্চ মাটির ঢিবি, মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন দিঘির নীল জলরাশি। পাড়ভূমিসহ এ দিঘির মোট জমির পরিমাণ ১৪৬ একর। দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৩৯৯ ফিট, প্রস্থ ৯৯৮ ফিট। গভীরতা গড়ে প্রায় ৯ মিটার, পাড়ের উচ্চতা ১ হাজার ৩৫০ মিটার। এ ছাড়া বাংলোর পাশে একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা রয়েছে। এখানে বিভিন্ন রঙের হরিণ, বানর, পাখিসহ কিছু পশুপাখি রয়েছে। এর পাশে রয়েছে শিশুদের জন্য পার্ক। তৎকালীন রাজা প্রাণনাথ প্রজাদের জলকষ্ট দূরীকরণ, সেচ-সুবিধা ও দুর্ভিক্ষপীড়িত প্রজাদের কাজের বিনিময়ে খাদ্য ও সংস্থান হিসেবে দিঘিটি খনন করান। এটি খনন করতে সে সময় প্রায় ৩০ হাজার টাকা ও ১৫ লাখ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল। ১৭৫০ থেকে ১৭৫৫ সালের মধ্যে রামসাগর খনন করা হয়। ২০০১ সালে রামসাগরকে জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা দেওয়া হয়। সুখসাগর : দিনাজপুর শহর থেকে সড়কপথে উত্তর-পুব দিকে ২ কিলোমিটার দূরে রাজবাটি। রাজবাটি থেকে ১০০ মিটার দূরে ‘সুখসাগর’। চারদিকে শাল ও আকাশমণি বাগান আর দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, যেন শহরের ব্যস্তময় জীবনে একটু শান্তির সুবাতাস বইয়ে দেয়। স্বচ্ছ জলরাশি, মাছের সাঁতার কাটা ও লাফালাফি এ সাগরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে। সাগরের পাড় যেন ছোট পাহাড়ের মতো। শীতকালে বসে অতিথি পাখির মেলা। সুখসাগর ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে ইকো পার্ক। যেখানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ তথা পরিবেশ উন্নয়নে পাখির অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। সুখসাগরের আয়তন ২২.৪৪ একর। এখানে পিকনিক ও ট্যুরিস্ট স্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। মাতাসাগর : রাজা প্রাণনাথের সময় খনন করা হয়েছে মাতাসাগর। সুখসাগর থেকে উত্তরে এ দিঘির অবস্থান। দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৪৫.৬০ একর জমির নিয়ে অবস্থান। এর পাড়ের উচ্চতা কম কিন্তু বিস্তৃতি অনেক। মাতাসাগরের নৈসর্গিক পরিবেশ দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এখন পাড়ের উচ্চতা কমে গেছে। এ সাগর লিজ দেওয়ার পর থেকে দর্শনার্থীদের যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। আনন্দ সাগর : দিনাজপুর শহরের অদূরে আনন্দ সাগরের অবস্থান। এখানে প্রতি বছর হিন্দুধর্মাবলম্বীরা গোষ্ঠপূজা করেন এবং এক দিনের মেলাও বসে। জনশ্রুতি আছে, দিনাজপুরের তৎকালীন রাজা প্রাণনাথ রানীকে নিয়ে সোনার নৌকায় রাজবাড়ি থেকে পানিপথে নৌবিহারে এ দিঘিতে আসতেন। এ জন্যই এর নাম হয়েছে আনন্দ সাগর। দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজের উত্তরে এর অবস্থান। ৭ একর আয়তনের এ দিঘির গভীরতা তুলনামূলক কম। বর্তমানে আনন্দ সাগরে মাছ চাষ করা করা হয়। কোনো সংস্কার না করায় পাড় বিলীনের পথে। অনেক গাছ ছিল এখন নেই। জুলুম সাগর : ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী সাধারণ মানুষকে এ দিঘিতে এনে অত্যাচার করত বলে নাম হয়েছে জুলুম সাগর। ইতিহাসবেত্তা মেহরাব আলীর বই থেকে জানা যায়, জুলুম সাগর দিনাজপুর গোর-ই-শহীদ বড় ময়দানের পশ্চিমে পুরনো দিঘি। একদা শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশগত উন্নতিকল্পে জেলখানার কয়েদিদের দ্বারা জুলুম করে এ দিঘি খনন করা হয়ে থাকতে পারে। তাই এর নাম জুলুম সাগর। দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে ভূমিখন্ডের ওপর ছিল রাজাদের নির্মিত জুলুম সাগর প্রাসাদ। একসময় এ প্রাসাদ ছিল ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বাসভবন। কিন্তু দীর্ঘদিনের সংস্কারের অভাবে দিঘিটি বর্তমানে জঙ্গলাকীর্ণ। বর্তমানে দিনাজপুর সার্কিট হাউস সংলগ্ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের বিনোদন কেন্দ্র কৃষ্ণকলির নিচে এ সাগরের অবস্থান। প্রায় ৮৪৩ শতক আয়তনের সাগরটি দিনাজপুরের মানুষের প্রিয়।

সর্বশেষ খবর