বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও সুবিধা চান গার্মেন্ট মালিকরা

সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা সহজ শর্তের ঋণ ফেরতের সময় বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা এবং ঋণের গ্রেস পিরিয়ড এক বছর করার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ বিকেএমইএ

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাস মহামারীর ক্ষতি পোষাতে গত এপ্রিলে মাত্র ২ শতাংশ সুদে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার পর আরও সুবিধা চায় গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-বিকেএমইএ। আর তাদের এই সুবিধার দাবি পূরণে জোর অনুরোধ করেছে খোদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ কভিড-১৯-এর কারণে তৈরি পোশাক খাতের বাতিল বা স্থগিত হওয়া রপ্তানি আদেশগুলো প্রায় শতভাগই আবার ফিরে এসেছে। নতুন রপ্তানি আদেশও আসছে। বিশেষজ্ঞ ও অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গার্মেন্ট মালিকরা সব সময়ই বেশি বেশি চান। সরকারও তাদের বিভিন্ন রকম সুযোগ-সুবিধা দিয়েই আসছে, যা শুধু এ খাতে বারবার না দিয়ে অন্য খাতেও দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

জানা গেছে, কভিডের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রপ্তানি খাত হিসেবে গার্মেন্টসহ পুরো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য একটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। এর আওতায় সহজ শর্তে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয় গার্মেন্ট মালিকদের, যা দিয়ে এ খাতের শ্রমিকদের এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই চার মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী এই অর্থ ছয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১৮টি কিস্তিতে দুই বছরের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। এতে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ২ শতাংশ অতিরিক্তসহ মূল টাকা পরিশোধ করার শর্ত দেওয়া হয়। কিন্তু এই অর্থ ৬০ কিস্তিতে ফেরতের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদ ও এক বছরের গ্রেস পিরিয়ড করার অনুরোধ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পোশাক খাতের মালিকরা যে মাত্রায় সুবিধা পেয়ে আসছেন, এমন সুবিধা আর কোনো খাতকে দেওয়া হয়নি। এটা নজিরবিহীন। এর পরও তারা আবার অতিরিক্ত সুবিধা পেতে তদবির করছেন। এ ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগকে তা অনুমোদনের অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ অনুমতি দিলে তা বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র জানায়, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখা থেকে ২২ অক্টোবর এ-সংক্রান্ত একটি অনুরোধপত্র অর্থ বিভাগের সচিবকে পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি সারাংশ পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রীর কাছেও। অর্থ বিভাগ শিগগিরই এর অুনমোদন দেবে বলে জানা গেছে। অথচ চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের কারণে তৈরি পোশাক খাতের বাতিল হওয়া রপ্তানি আদেশগুলোর প্রায় শতভাগই আবার ফিরে এসেছে। পাশাপাশি নতুন করে ক্রয়াদেশও পাচ্ছেন গার্মেন্ট মালিকরা, যার প্রভাবে গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানিতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। এতে গার্মেন্ট মালিকদের ক্ষতি পুষিয়ে আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে যাওয়ার কথা প্রমাণ করে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। অথচ তারা এখনো লোকসানের দাবি তুলে সরকারের কাছে অতিরিক্ত সুবিধা দাবি করছেন।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা সত্য যে সরকার গার্মেন্ট মালিকদের বারবার সুবিধা দিয়ে থাকে। আবার এটাও ঠিক, গার্মেন্ট খাতই আমাদের রপ্তানিকে টিকিয়ে রাখছে। তবে গার্মেন্ট খাতে বেশি সহায়তা দিতে গিয়ে যেন অন্য খাত ক্ষতিগ্রস্ত বা বঞ্চিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত।’

করোনার সংক্রমণ রোধে চলতি বছর ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এর আগের দিন ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রপ্তানি খাতের শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। তবে এপ্রিল-মে-জুনের বেতন দিতে এই ৫ হাজার কোটি টাকার বাইরে আরও আড়াই হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় সহজ শর্তে এবং মাত্র ২ শতাংশ সার্ভিস চার্জের আওতায়। এরপর জুলাইয়ের বেতন পরিশোধে আরও ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণসুবিধা দেওয়া হয় রপ্তানিমুখী খাতকে। অবশ্য এ ঋণের ক্ষেত্রে সুদহার ৯ শতাংশ ধার্য করা হয়, যার মধ্যে গ্রাহক (গার্মেন্ট মালিকরা) দেবেন সাড়ে ৪ শতাংশ, বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে সরকার। তিন দফায় নেওয়া এ ঋণের মধ্যে প্রথম দুই দফায় নেওয়া সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণের গ্রেস পিরিয়ড, কিস্তি ও পরিশোধের সময় বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে ২২ অক্টোবর চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি শাখা।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দেশে দেশে লকডাউনও শুরু হয়েছে। আগামীতে কী অবস্থা হতে পারে তা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমরা তো আগের মতো অর্ডার পাচ্ছি না। প্রায় সব বায়ারই কমিয়ে কমিয়ে অর্ডার দিচ্ছেন। এমনকি অক্টোবর মাসে আমাদের ৫ দশমিক ৮৬ ভাগ রপ্তানি কম হয়েছে।’ ফলে সামনের দিনের ধাক্কাটা সামলানোর আগাম প্রস্তুতি হিসেবেই তারা এ সুবিধা চাইছেন।

সর্বশেষ খবর