শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এবার সংকট কাঁচা পাট নিয়ে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এবার সংকট কাঁচা পাট নিয়ে

দেশের পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের পর এবার সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে কাঁচা পাট নিয়ে। কভিড-১৯ এর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমায় দেশে বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ৮০ লাখ বেল পাট উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে রপ্তানি হয় ৮ থেকে ৯ লাখ বেলের মতো। করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় এবার রপ্তানি আরও কমে যেতে পারে। বাকি পাট সরকারি-বেসরকারি পাটকলগুলো চাহিদা অনুযায়ী কিনে নেয়। তবে এবার একযোগে ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করায় বিপুল পরিমাণ কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থেকে যাবে বলে আশঙ্কা করছে এ খাতের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতিতে কাঁচা পাট রপ্তানিতে নতুন করে আর শুল্কারোপ না করার সুপারিশ করে এ খাতের সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ জুট অ্যাসোসিয়েশন। তারা কাঁচা পাট রপ্তানি খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত খাত বিবেচনা করে ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা সুবিধা চেয়েছেন। এ ছাড়া পাট খাতের সমস্যা সমাধানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। জুট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে দেশে প্রায় ৮৪ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি জুটমিলগুলোর সারা বছরের পাটের চাহিদা ৪০ থেকে ৪৫ লাখ বেল। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় জুটমিলগুলো প্রতিবছর ১২ থেকে ১৩ লাখ বেল পাট ক্রয় করে। এ বছর বন্ধ থাকায় তারা এ পরিমাণ পাট কিনবে না। উপরন্তু তাদের কাছে মজুদকৃত প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ বেল পাট বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরে গত ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো চিঠিতে জুট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী উল্লেখ করেন, এ বছরও প্রচুর কাঁচা পাট উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আমরা মনে করি। আমাদের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৮-৯ লাখ বেল। বৈদেশিক বাজার সংকুচিত হওয়ায় চেষ্টা করলেও এর বেশি পাট রপ্তানি করা যাবে না। চলতি বছর পাট রপ্তানি আরও কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ লাখ ২৫ হাজার বেল রপ্তানি হলেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার বেল। কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এ বছর আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের চাহিদা আরও কমে যেতে পারে। ফলে দেশে উৎপাদিত পাট উদ্বৃত্ত থাকলে সেটি কৃষকের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। তবে কাঁচা পাট নিয়ে উল্টো কথাও চালু রয়েছে বাজারে। সরকারি পাটকল বন্ধ হলেও করোনা মহামারীর কারণে পাটের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কম হয়েছে- এই তথ্য দিয়ে উল্টো কাঁচা পাট রপ্তানির রেশ টেনে ধরার সুপারিশ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে জুটমিল স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তারা কাঁচা পাট রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট শুল্কারোপ করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিপার্স কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি পাটকল মালিকরা সরকারকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে অনেক সময় বাংলাদেশের কাঁচা পাটের আন্তর্জাতিক বাজার নষ্ট করেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় সরকার কাঁচা পাট রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ায় বাজার সংকুচিত হয়েছে। ফলে যত চেষ্টাই হোক না কেন উৎপাদিত পাটের মধ্যে ১০ লাখ বেলের বেশি রপ্তানি করা সম্ভব হবে না। তবে কাঁচা পাট রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও কৃষকদের ক্ষতি হবে না বলে মনে করেন তিনি। রেজাউল করিম বলেন, এবার পাট মৌসুম শুরুর পর এখনো পর্যন্ত কৃষকরা দাম ভালোই পাচ্ছেন। গ্রেডভেদে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে কাঁচা পাট।

সর্বশেষ খবর