রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বহুমুখী গ্রাম সমবায় হলে দরিদ্র থাকবে না

৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বহুমুখী গ্রাম সমবায় হলে দরিদ্র থাকবে না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি বাড়ি একটি খামারের সঙ্গে আমরা পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থা করছি। এটা শুধু প্রকল্পের ওপর নির্ভরশীল থাকবে না। তিনি বলেন, বহুমুখী গ্রাম সমবায় গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র থাকবে না। গতকাল সকালে ৪৯তম জাতীয় সমবায় দিবস-২০২০ উদযাপন এবং জাতীয় সমবায় পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এবং প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য সমবায় পুরস্কার ২০১৯ বিজয়ীদের মাঝে বিতরণ করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল আহসান স্বাগত বক্তৃতা করেন। সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ ইউনিয়নের সভাপতি শেখ নাদির হোসেন লিপু মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। দেশের সমবায় খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়। সমবায় অধিদফতর প্রকাশিত ‘সমবায়ের সাফল্য গাঁথা’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দরিদ্রতা নির্মূল করতে পারব। কাজেই, সমবায়ে যারা আছেন প্রত্যেকে সেভাবে কাজ করে যাবেন। বাংলাদেশকে যেন আমরা ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। তিনি বলেন, কাজ করলে ব্যাংকে টাকা জমবে এবং সেখান থেকে মূলধন নিয়ে তারা ব্যবসা করতে পারবে। আমরা প্রত্যেক পরিবারকে আত্মনির্ভরশীল করতে চাই। ভিটেমাটি ছেড়ে কাউকে যেন দেশান্তরিত হতে না হয় এ জন্য আমরা ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার সেই নীতিতে বিশ্বাস করি, সমবায়ের মাধ্যমেই আমরা দেশকে যেন উন্নত করতে পারি। কাজেই যারা সমবায়ের সঙ্গে জড়িত, আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা একটু আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ববোধ নিয়ে কাজ করেন। প্রাথমিকভাবে লাভের আশা না করে এটাকে একটা স্থায়ী উৎপাদনমুখী এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তৈরি করুন, যাতে প্রত্যেক মানুষ লাভের অংশ পায়। শুধু আমি একা খাব, সেটা না। সবাইকে নিয়ে সবাইকে দিয়ে খাব, সবাইকে নিয়েই কাজ করব। সেই চিন্তাভাবনাই সমবায়ে সব থেকে বেশি প্রয়োজন। সমবায়ে নারীদের এগিয়ে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের অর্ধেক অংশই নারী। নারীরা যদি এগিয়ে আসে, তাহলে দুর্নীতি একটু কমবে। কাজ বেশি হবে। প্রতিটি পরিবার উপকৃত হবে। পরিবারগুলো লাভজনক হবে। তিনি বলেন, আমাদের লোকসংখ্যা বেশি এটাও আমাদের সম্পদ। এই লোকসংখ্যা দেখে হতাশ হলে চলবে না। আমরা যদি তাদের কাজে লাগাতে পারি, তারাই আমাদের সমাজের জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে জাতির পিতা সমবায়ের কথা বলে গেছেন এবং তিনি বাধ্যতামূলক বহুমুখী সমবায়ের কথাও বলেছেন। কারণ তিনি জানতেন কীভাবে বাংলাদেশ উন্নত হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য তিনি তার কাজটা সম্পূর্ণ করে যেতে পারেনি। প্রবৃদ্ধি অর্জন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন সূচকে অগ্রগতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটা শুধু সম্ভব হয়েছে জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল বলেই। আর জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছি বলে এটা সম্ভব হয়েছে। কাজেই এটা আজকে পরীক্ষিত, বহুমুখী গ্রাম সমবায় যদি গড়ে তুলতে পারি বাংলাদেশে কোনো দারিদ্র্য থাকবে না। দরিদ্রতা সম্পূর্ণ নির্মূল হবে। সেটা আমরা করতে পারব। কাজেই এখানে আপনাদের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, যাঁরা সমবায়ী তাদের প্রত্যেকেরই এখানে একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। সেভাবেই আপনারা কাজ করে যাবেন যাতে বাংলাদেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত এবং দারিদ্র্যমুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত এবং রক্তের বিনিময়ে আমরা যেমন স্বাধীনতা অর্জন করেছি, তেমনি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেও অনেক ত্যাগ ও সংগ্রাম করতে হয়েছে। আর আজ আওয়ামী লীগ সরকারে রয়েছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশের ওপরে অর্জন করছিলাম। দারিদ্র্যের হার ৪০ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলারে উন্নীত করেছি। করোনা না দেখা দিলে হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম। কতগুলো জনগোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে সরকারের পাশাপাশি সমবায়ীদের সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী হিজড়াদের প্রসঙ্গে বলেন, মহান আল্লাহই তাঁদের এভাবে জন্ম দিয়েছেন, কাজেই তাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। কাজেই তারা কেন পরিবারের অংশ হিসেবে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে না এবং কাজ পাবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাসমান বেদে সম্প্রদায়কে মুন্সীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকার জায়গা প্রদান করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সমবায় সমিতি করে দেওয়ার মাধ্যমে জীবন-জীবিকায় নতুন করে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার প্রকল্প’ গ্রহণ করে। বর্তমানে এ প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ২১ হাজার ১৪২টি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ৫৬ লাখ ৪১ হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ প্রতিশ্রুতির আলোকে সমবায় ভিত্তিক আদর্শ গ্রাম প্রকল্প গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০টি গ্রামে ‘বঙ্গবন্ধুর গণমুখী সমবায় ভাবনার আলোকে’ ‘বঙ্গবন্ধু মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি।

শেখ হাসিনা শীতের আগমনের সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধি সম্পর্কে পুনরায় সবাইকে সতর্ক করেন এবং স্বাস্থ্যমতো বিধি অনুসরণের আহ্বান জানান। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যেন কেউ বের না হন সে দিকে দৃষ্টি রেখে নিজেকে এবং অপরকে নিরাপদ রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর