সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি এখন জলে স্থলে আকাশপথে বিচরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বিজিবি এখন জলে স্থলে আকাশপথে বিচরণ করবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিজিবি এয়ার উইংয়ের জন্য দুটি এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্ব পালনে এখন থেকে বিজিবি সদস্যরা জলে-স্থলে ও আকাশপথে বিচরণ করবেন। খবর বাসস’র।

গতকাল বিজিবি এয়ার উইংয়ের জন্য ক্রয়কৃত ২টি এমআই-১৭১ই হেলিকপ্টার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পিলখানার বিজিবি সদর দফতরে এ উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে বিজিবির কর্মকা- সম্পর্কে একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। বিজিবির একটি  সুসজ্জিত চৌকশ দল প্রধানমন্ত্রীকে অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবি এখন অন্যান্য বাহিনীর মতো ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত হয়েছে। আমরা আধুনিক হেলিকপ্টার ক্রয় করেছি। প্রকৃতপক্ষে হেলিকপ্টারের কথা আমি নিজেই উদ্যোগ নিয়ে বলেছিলাম। কারণ, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দুর্গম পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া একান্তভাবে দরকার। সে কারণেই এই হেলিকপ্টার ক্রয় করে দিয়েছি। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি, এই মুজিববর্ষেই বিজিবি হেলিকপ্টার পেল। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের তৃতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে বলেছিলেন, ‘ঈমানের সঙ্গে কাজ করো, সৎ পথে থেকো, দেশকে ভালোবেসো।’ তিনি বলেন, এটা শুধু বিজিবি নয়, বাংলাদেশের সবার জন্যই প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তের সার্বিক সুরক্ষা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ রাখার জন্য বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোভুক্ত অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের পরিবর্তে আধুনিক, যুগোপযোগী ও কার্যকরী ট্যাংক বিধ্বংসী মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভারত এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৬২টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৪০১ দশমিক ৫ কিলোমিটার সীমান্ত ইতিমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। অবশিষ্ট ১৩৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় আরও বিওপি স্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, গত ২২ সেপ্টেম্বর একনেকের সভায় আরও ৭৩টি নতুন কম্পোজিট বিওপি নির্মাণের বিষয়ে অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। এতে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধিসহ সৈনিকদের মনোবলের ওপরে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। শেখ হাসিনা বলেন, গত প্রায় ১২ বছরে বিজিবির নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী ৫টি রিজিয়ন সদর দফতর স্থাপন করে কমান্ড স্তর বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এ বাহিনীকে আরও গতিশীল ও ফলপ্রসূ করা হয়েছে। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো স্থাপন করা হয়েছে। নতুন ৪টি সেক্টর ও ৫টি রিজিয়নাল ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ও  ১৫টি ব্যাটালিয়ন স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়াও নতুন ১৪০টি বিওপি, ৩৪টি বিএসপি এবং একটি এয়ার উইং সৃজন করার মাধ্যমে প্রথম পর্যায়ের পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ১৪৬ জন জনবল নিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, এ বাহিনীতে আরও ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে যা তিনটি ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ৪ হাজার ২৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি রিজিয়ন সদর দফতর, একটি সেক্টর সদর দফতর এবং ৪টি ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট, একটি রিজিয়ন ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, একটি স্টেশন সদর দফতর, একটি গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন সৃজনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে যা ২০২২ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। এর মাধ্যমে এই বাহিনী আরও শক্তিশালী হবে। দ্বিতীয় ধাপে মোট ৫ হাজার ৭৮২ জন জনবলের সমন্বয়ে একটি সেক্টর, পাঁচটি ব্যাটালিয়ন, একটি রিজার্ভ ব্যাটালিয়ন, একটি কে-নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার এবং ৫টি বর্ডার গার্ড হাসপাতালের জনবল বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব বিবেচনাধীন রয়েছে। সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৫ সালে বিজিবিতে প্রথম নারী সৈনিক নিয়োগের মাধ্যমে এ বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। বর্তমানে এ বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা ৮৪১ জন। বিজিবির কর্মকা-ে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার ও আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকা নির্বাচন করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮ কিলোমিটার সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভেইল্যান্স অ্যান্ড টেকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে বিজিবি সদর দফতর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিওপি এবং বিওপি পরিচালিত টহলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিজিবির অপারেশনাল সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে এবং কেন্দ্র থেকেই যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া এবং বাস্তবায়ন করা যাবে।

বিজিবির দৈনন্দিন দাফতরিক ও প্রশাসনিক কাজকে সহজ করার লক্ষ্যে ‘সীমান্ত ডাটা সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ভূমিকম্পের বিষয়টি বিবেচনায় এনে বিজিবি কর্তৃক যশোর অঞ্চলে ‘ডিজাস্টার রিকভারি’ (ডিআর) সাইট নির্মাণ করা হচ্ছে যা বিজিবিসহ দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যরাও ব্যবহার করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সুন্দরবন সংলগ্ন জলসীমায় কার্যকরী টহল পরিচালনার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে এসব উন্নত নৌযান মোতায়েন করে নাফনদ ও সাগর উপকূলে ইয়াবা পাচার ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি অধিক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। তিনি বিডিআর বিদ্রোহের প্রতি ইঙ্গিত করে এ ধরনের ঘটনাকে অনাকাক্সিক্ষত আখ্যায়িত করে এ ধরনের ঘটনা যেন আর ঘটতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক করেন। শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক তা আমি চাই না। কারণ, এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা নিজেদের, বাহিনীর এবং দেশের ক্ষতি সাধন করেছে।’ তিনি এ সময় বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না কেউ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে দেশের কোনো মানুষ ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। আমরা প্রত্যেকটি ঘরে আলো জ্বালাব, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, দেশের ৯৭ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। প্রত্যেকের ঘরেই আলো জ্বলবে। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল মাদারীপুর, ফরিদপুর এবং মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে তিনি এ কথা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে সেবার মনমানসিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগ গণমানুষের সেবায় গড়ে ওঠা সংগঠন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর