রাজশাহীকে বলা হয় রাজাদের আদি বাসস্থান। কিন্তু এখন নেই রাজা, নেই তাদের রাজত্ব। তবুও রাজশাহী ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাথা উঁচু করে কালের সাক্ষী হয়ে আছে তাদের রাজবাড়িগুলো। এগুলো ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে স্বাক্ষর রেখে চলেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। দর্শনার্থীরা রাজবাড়িগুলো দেখতে এখনো ভিড় জমান। ছুঁয়ে দেখতে চান বহু দিনের পুরনো সেই ঐতিহ্যকে। এমনই একটি ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি রাজশাহীর তামলি রাজার বাড়ি। রাজশাহী শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরেই এই রাজবাড়িটির অবস্থান। রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছি গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে ৩০০ বছরের পুরনো এই বাড়িটি। তবে সেটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
স্থানীয়দের মতে, ৩০০ বছর আগে অত্যাচারী রাজা তামলি এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি বহু বছর ধরে এই বড়গাছি গ্রামে থেকে এলাকা শাসন করেন। এরপর এক রাতে পালিয়ে যান। কবে কখন এবং কোথায় চলে যান তা কারোরই জানা নেই। রাজা চলে গেলেও বহুদিন তার রাজবাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এখন সেটি একেবারেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সরেজমিনে দেখা যায়, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে রাজবাড়িটি। বাড়িটিতে নেই আভিজাত্যের ছাপ। ধ্বংসস্তূপের মতো এখনো কয়েকটি দেয়াল আছে। ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে রাজবাড়িটির অবকাঠামো। বিশাল মাঠের মাঝখানে তিন পাশে দাঁড়িয়ে আছে শুধুই তিনটি স্তম্ভ। সেই স্তম্ভগুলোর গা বেয়ে এঁকে বেঁকে উঠে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির পরগাছা। স্থানীয়রা বলছেন, সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িটির এই দশা। বছরের পর বছর ধরে অবহেলায় পড়ে আছে এই রাজবাড়িটি। এক সময় স্থানীয়দের কাছেও কদর হারায়। এরপরই শুরু হয় বাড়িটির দুর্দশা। ধীরে ধীরে ভেঙে ফেলা হয় বাড়িটির অবকাঠামো। বাড়িটির পুরনো ইট ভেঙে ব্যবহার করা হচ্ছে অন্য কাজে। তবে ঠিক কোন সময় থেকে এই রাজবাড়িটি ভাঙা শুরু হয়েছে তা সঠিকভাবে বলতে পারেননি স্থানীয়রা। গ্রামের প্রবীণ মানুষ নূর ইসলাম বলেন, ‘এই বাড়িটির ইতিহাস অনেক পুরনো। আমাদের দাদারাই এর ইতিহাস ঠিকমতো বলতে পারেননি। বাড়িটি এখন স্থানীয় এক প্রভাবশালী পরিবারের মালিকানায় আছে। তারাই বছরের পর বছর ধরে ভোগ দখল করে আসছেন। আরেক প্রবীণ নারী মাজেদা বেগম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই এই বাড়িটিকে এভাবে দেখে আসছি। এই বাড়ির মধ্যে কখনো যাই না। একমাত্র গরু কিংবা ছাগল ঢুকলেই তখন বের করতে যাই। অনেক বছর ধরেই এই রাজবাড়িটির এমন বেহাল দশা। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদা সুলতানা বলেন, তামলি রাজার বাড়ি নিয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এমন বাড়ি আছে বলেও আমরা জানি না। খোঁজখবর নিয়ে দেখব। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল আক্তার বলেন, আমি দায়িত্বে আসার পরই তামলি রাজার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে প্রায় পুরোটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। বাড়িটি দেখার মতো আর অবস্থায় নেই। তারপরও এটি সংরক্ষণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট অধিদফতরের সঙ্গে কথা বলব।