বুধবার, ১১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

নৈসর্গিক আলোয় পর্যটক টানছে কান্তজিউ মন্দির

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

নৈসর্গিক আলোয় পর্যটক টানছে কান্তজিউ মন্দির

রাতের নৈসর্গিক আলোয় পর্যটক টানছে দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির। দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধের পর ভিড় বাড়ছে এই মন্দিরে।

জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগরে প্রাচীন টেরাকোটার অনন্য নিদর্শন এই কান্তজিউ মন্দির। শহর থেকে মন্দিরে যাওয়ার পথে ঢেপা নদীর ওপর তৈরি হয়েছে কান্তনগর সেতু। মন্দিরের পাশে তৈরি হয়েছে রেস্ট হাউস এবং মিউজিয়াম। রয়েছে মার্কেট। সংস্কার করা হয়েছে রাস্তার। প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ। নাম দেওয়া হয়েছে সিদু কানু চত্বর। মন্দিরটি যেখানে, সেটি প্রাচীন স্থান এবং দেয়ালঘেরা দুর্গ নগরীর অংশ। প্রায় এক মিটার উঁচু এবং ১৮ মিটার বাহুবিশিষ্ট প্রস্তরনির্মিত বর্গাকার বেদির ওপর এই মন্দির নির্মিত। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬ মিটার। চারদিকে বারান্দা। প্রত্যেক বারান্দার সামনে দুটি করে স্তম্ভ। স্তম্ভগুলো বিরাট আকারের এবং ইটের তৈরি। স্তম্ভ ও পাশের দেয়ালের সাহায্যে প্রত্যেকটি দিকে ৩টি করে বিরাট খোলা দরজা তৈরি করা হয়েছে। বারান্দার পরেই রয়েছে কামরা। প্রধান কামরার চারদিকে বেশ কয়েকটি ছোট কামরা। তিনতলা বিশিষ্ট এই মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রত্ন ছিল। এজন্য এটিকে নবরত্ন মন্দির বলা হয়ে থাকে। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভূমিকম্পে মন্দিরের চূড়াগুলো ভেঙে যায়। মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট। মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদির শিলালিপি থেকে জানা যায়, জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ রায় (মৃত্যু ১৭২২ খ্রি.) তার শেষ জীবনে মন্দির তৈরির কাজ শুরু করেন এবং তার মৃত্যুর পর তার আদেশ অনুসারে দত্তক পুত্র মহারাজা রামনাথ রায় এই মন্দির তৈরির কাজ শেষ করেন ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে।

ইট দিয়ে তৈরি এই মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির চিত্রফলকের সাহায্যে রামায়ণ-মহাভারতের প্রায় সব কয়টি প্রধান কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন কাহিনি এবং সম্রাট আকবরের কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। অতি সুন্দর ও কারুকার্যময় এই কান্তজিউ মন্দির। পোড়ামাটির চিত্রফলকের এমন সুন্দর ও ব্যাপক কাজ বাংলার আর কোনো মন্দিরেই নেই। ঐতিহাসিক বুকানন হ্যামিলটনের মতে, এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দরতম মন্দির।

সর্বশেষ খবর