শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সংক্রমণ হারে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

শীতে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সংক্রমণ হারে বাড়ছে উৎকণ্ঠা

তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতেই দেশে করোনা সংক্রমণ হার বাড়তে শুরু করেছে। টেস্ট বাড়ানোয় করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্তও বেড়েছে। শীতের মৌসুম শুরু হতেই করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় জনমনে তৈরি হচ্ছে উৎকণ্ঠা। শীতে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কয়েকটি কারণে শীতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। তাই করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক পরা আবশ্যক। অবহেলা করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। মাস্ক না পরে হাঁচি-কাশি দিলে জীবাণু কণা অর্থাৎ ড্রপলেট ছড়িয়ে পড়বে। আদ্রতা কম থাকায় ড্রপলেট দ্রুত শুকিয়ে অ্যারোসল অর্থাৎ ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হবে। এসব জীবাণু মিশ্রিত ক্ষুদ্র কণা বাতাসে ভাসমান থেকে সংক্রমণ বাড়াবে। এতে বাতাসের মাধ্যমে জীবাণুর সংক্রমণ বাড়বে। অন্য সময় দ্রুত মাটিতে ড্রপলেট পড়ে যেত কিন্তু শীতে তা হবে না। শীতে ধুলাও বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, শীতে স্বাস্থ্যগত কয়েকটি বিষয় করোনার ঝুঁকি বাড়াবে। শীতে ফ্লুসহ বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস শরীরে আক্রমণ করে। সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লেগে থাকে মানুষের। এতে নাক ও গলার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শীতে সংক্রমণ বাড়ার এটা আরেকটি কারণ। ইউরোপসহ বেশ কয়েকটি দেশে শীতে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১১টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৮০ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১০ দশমিক ১৪। ২১ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৮৬টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৪৫ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১০ দশমিক ৯৭। ২২ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৫৮টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৯৬ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৩৪। ২৩ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ১১৯টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৫৮৬ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ২৩। ২৪ অক্টোবর নমুনা টেস্ট    হয়েছিল ১০ হাজার ৯৯৮টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯৪ জনের। সর্বনিম্ন সংক্রমণ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই বাড়তে থাকে করোনার সংক্রমণ। ৮ নভেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১২ হাজার ৭৬০টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৫৫। ৯ নভেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৯৯। ১০ নভেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৩ হাজার ৫২০টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১২ দশমিক ৫৭। ১১ নভেম্বর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৪ হাজার ৫২৪টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৩৩ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১১ দশমিক ৯৩। গতকাল নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১৭ হাজার ১১২টি, করোনা শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ জনের। সংক্রমণ হার ছিল ১০ দশমিক ৭৮। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, যতদিন আক্রান্ত ব্যক্তি থাকবে ততদিন করোনা সংক্রমণ থাকবে। তাপমাত্রার সঙ্গে করোনার সম্পর্ক নেই কিন্তু আমাদের কর্মকান্ডের সঙ্গে আছে। জনসমাগম হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই এবার শীতে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। গ্রীষ্মের তাপে যদি করোনার জীবাণু ক্ষতিগ্রস্তই হতো, তাহলে ইকুয়েডর, সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্রের এরিজনায় করোনায় লাশের সারি থাকত না। শীত প্রধান দেশে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দরজা, জানালা লাগিয়ে মানুষ গাদাগাদি করে থাকে। এ জন্য সংক্রমণ বাড়ে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে শীতে সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। সামাজিক মেলামেশা না কমলে ঋতু নয় হুট করেই যে কোনো সময় সংক্রমণ বাড়তে পারে। গণপরিবহনের দরজা, জানালা বন্ধ থাকায় মুখ না ঢেকে হাঁচি দিলে জীবাণু ছড়িয়ে পড়বে স্বল্প পরিসরে। হঠাৎ করে কোথাও সংক্রমণের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এটা তরঙ্গ মেনে আসবে না। টেস্ট বাড়িয়ে রোগী শনাক্ত করতে হবে। আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশনে না রাখলে হঠাৎ করে বিভিন্ন জায়গায় অনেক করোনা রোগী মিলবে। একজন থেকে ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগবে না। তাই অবেহলা নয় সতর্ক থাকতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর