সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কোন রুটে চলবে কোন রঙের বাস

ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে রুট ও কোম্পানি কমানোর সুপারিশ করেছে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি। সমীক্ষা প্রতিবেদনে ২৯১টি রুটের পরিবর্তে ৪২টি রুটে ২২টি কোম্পানির মাধ্যমে গণপরিবহন ব্যবস্থাপনা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া নগরীতে চলাচলরত আড়াই হাজার কোম্পানির প্রায় ৩০ হাজার পরিবহনের পরিবর্তে ৯ হাজার ২৭টি গণপরিবহন পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা নিয়ে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ করার জন্য ১০ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তৎকালীন দক্ষিণ সিটি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। এরপর কমিটি বাস্তবতা সমীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে। দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় ধরে সমীক্ষা করে কমিটি গত ১০ নভেম্বর প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, আরবান ক্লাস্টার (গোলাপি) রঙের ৮৮৩টি বাস ১ থেকে ৪ নম্বর রুটে চলাচল করবে। বর্তমানের ২৯১টি রুটের মধ্যে ২৩টি রুটকে ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ১ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-নাবিস্কো-মগবাজার-কাকরাইল-সায়েদাবাগ/সদরঘাট। রুট নম্বর ২ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-ফার্মগেট-শাহবাগ-পল্টন-সায়েদাবাদ/কেরানীগঞ্জ জেলখানা/ঝিলমিল। রুট নম্বর ৩ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ-রেলগেট-মৌচাক-কাকরাইল-গোলাপশাহ মাজার-সদরঘাট/ঝিলমিল। রুট নম্বর ৪ : আবদুল্লাহপুর-বেড়িবাঁধ, মাজার রোড-গাবতলী-শিকদার মেডিকেল-কামরাঙ্গীরচর-বাবু বাজার। নীল রঙের এক হাজার ৪৩৩টি বাস ৫ থেকে ৮ নম্বর রুটে চলাচল করবে। পুরনো ২১টি রুট ভেঙে এই চারটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ৫ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-নতুনবাজার-বাড্ডা-মৌচাক-কাকরাইল-মৎস্য ভবন-শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাব-আজিমপুর।

রুট নম্বর ৬ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-মহাখালী-বিজয়সরণি-মানিক মিয়া এভিনিউ-সোবহানবাগ-সায়েন্স ল্যাব-আজিমপুর। রুট নম্বর ৭ : আবদুল্লাহপুর-কুড়িল-ফ্লাইওভার-ইসিবি চত্বর-কালশী-মিরপুর ১০-মিরপুর ১-টেকনিক্যাল-গাবতলী-হেমায়েতপুর। রুট নম্বর ৮ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-শ্যামলী-শিশুমেলা-আগারগাঁও-বিজয়সরণি-মহাখালী-বনানী-শেওড়াপাড়া কুড়িল-আবদুল্লাহপুর। মেরুন এ রঙের এক হাজার ১০৮টি বাস ৯ থেকে ১৩ নম্বর রুটে চলবে। পুরনো ৩৫টি রুট ভেঙে এই ৫টি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ৯ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-ফার্মগেট-বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-খিলগাঁও ফ্লাইওভার/মতিঝিল-সায়েদাবাদ/সাইনবোর্ড। রুট নম্বর ১০ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-ফার্মগেট-শাহবাগ-গুলিস্তান/ মতিঝিল/ সায়েদাবাদ-সাইনবোর্ড/ ধলেশ্বর/ কাচপুর। রুট নম্বর ১১ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-মতিঝিল/ ফুলবাড়িয়া/কাচপুর/নারায়ণগঞ্জ। রুট নম্বর ১২ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-শ্যামলী-আসাদগেট-কলাবাগান-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-গুলিস্তান-মতিঝিল-সদরঘাট। রুট নম্বর ১৩ : হেমায়েতপুর-গাবতলী-টেকনিক্যাল-শ্যামলী-আগারগাঁও-বিজয়সরণি-মহাখালী-গুলশান ১-বাড্ডা-রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার। কমলা রঙের এক হাজার ১২২টি বাস ১৪ থেকে ২০ নম্বর রুটে চলবে। পুরনো ৪৭টি রুট ভেঙে সাতটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ১৪ : মিরপুর চিড়িয়াখানা-মিরপুর ১-টেকনিক্যাল-শ্যামলী-আসাদগেট-সায়েন্স ল্যাব-নিউমার্কেট-আজিমপুর-ফুলবাড়িয়া-তাঁতিবাজার-বাবুবাজার-কেরানীগঞ্জ-বান্দুরা। রুট নম্বর ১৫ : মিরপুর ১২-মিরপুর ১০-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও-ফার্মগেট-শাহবাগ-পল্টন-গোলাপশাহ মাজার-তাঁতিবাজার-রায়সাহেব বাজার-সদরঘাট। রুট নম্বর ১৬ : মিরপুর-১৪, মিরপুর-১০-শেওড়াপাড়া-খামারবাড়ি-ফার্মগেট-বাংলামোটর-মগবাজার-মৌচাক-কমলাপুর-শাপলাচত্বর-দয়াগঞ্জ-পোস্তগোলা। রুট নম্বর ১৭ : গাবতলী/মিরপুর-১-কালশী-জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার-কুড়িল ফ্লাইওভার-নতুনবাজার/বেরাইদ-বাড্ডা-রামপুরা ব্রিজ-বনশ্রী-স্টাফ কোয়ার্টার। রুট নম্বর ১৮ : মিরপুর-১২, ১০-শেওড়াপাড়া-ফার্মগেট-বাংলামোটর-শাহবাগ-পল্টন-গুলিস্তান-শাপলাচত্বর-কমলাপুর-টিটিপাড়া-বাসাবো-খিলগাঁও তালতলা। রুট নম্বর ১৯ : মিরপুর চিড়িয়াখানা-মিরপুর-১-টেকনিক্যাল-শ্যামলী-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-পল্টন-গুলিস্তান-শাপলা চত্বর-কমলাপুর-টিটিপাড়া-খিলগাঁও-তালতলা। রুট নম্বর ২০ : মিরপুর-১২/ ইসিবি চত্বর-মিরপুর-১০-কাজিপাড়া-শেওড়াপাড়া-আগারগাঁও-মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-সোবহানবাগ-সায়েন্স ল্যাব-নিউমার্কেট-আজিমপুর।

সবুজ রঙের এক হাজার ৪৩৩টি বাস ২১ থেকে ২৮ নম্বর রুটে চলবে। পুরনো ৫৪টি রুট ভেঙে এই ৮টি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ২১ : বসিলা-ট্রাক স্ট্যান্ড-শঙ্কর-জিগাতলা-সায়েন্স ল্যাব-মৎস্যভবন-কাকরাইল-শাপলা চত্বর-হানিফ ফ্লাইওভার-সাইনবোর্ড-নারায়ণগঞ্জ। রুট নম্বর ২২ : ঘাটারচর-বসিলা-ট্রাকস্ট্যান্ড-আসাদগেট-ফার্মগেট-শাহবাগ-পল্টন-গুলিস্তান-মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার-মৃধাবাড়ি-ব্রিজ-রূপশী-বুলতা। রুট নম্বর ২৩ : ঘাটারচর-বসিলা-ট্রাকস্ট্যান্ড-আসাদগেট-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-পল্টন শাপলা চত্বর-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-সাইনবোর্ড-চট্টগ্রাম রোড-মেঘনা ঘাট। রুট নম্বর ২৪ : ঘাটারচর-বসিলা-ট্রাকস্ট্যান্ড-জাপান গার্ডেন সিটি-শ্যামলী-শিশুমেলা-আগারগাঁও-কাজিপাড়া-কালশি-জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার-আবদুল্লাহপুর।

রুট নম্বর ২৫ : ঘাটারচর-বসিলা-ট্রাকস্ট্যান্ড-টাউন হল-আসাদগেট-মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ-বিজয়সরণি-মহাখালী-কাকলী-কুড়িল-আবদুল্লাহপুর। রুট নম্বর ২৬ : ঘাটারচর-বসিলা-ট্রাকস্ট্যান্ড-টাউন হল-আসাদগেট-কলাবাগান-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-কাকরাইল-শাপলা চত্বর-দয়াগঞ্জ-পোস্তগোলা-নারায়ণগঞ্জ। রুট নম্বর ২৭ : ঘাটারচর-শিয়া মসজিদ-শ্যামলী-আগারগাঁও-বিজয়সরণি-মহাখালী-গুলশান-১-রামপুরা ব্রিজ-বনশ্রী-স্টাফ কোয়ার্টার। রুট নম্বর ২৮ : ঘাটারচর-মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড-জিগাতলা-সায়েন্স ল্যাব-শাহবাগ-মৎস্য ভবন-কাকরাইল-মৌচাক-খিলগাঁও-তালতলা/স্টাফ কোয়ার্টার। বেগুনি রঙের এক হাজার ৮৯টি বাস ২৯ থেকে ৩৪ নম্বর রুটে চলবে। পুরনো ৩৩টি রুট ভেঙে এই ছয়টি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ২৯ : কাচপুর-যাত্রাবাড়ী-বাসাবো-মালিবাগ-নতুনবাজার-কুড়িল-বিমানবন্দর-আবদুল্লাহপুর। রুট নম্বর ৩০ : ডেমরা-কোনাপাড়া-মৃধাবাড়ি-সায়েদাবাদ-মতিঝিল-ফকিরাপুল-মগবাজার-সাত রাস্তা-মহাখালী-বনানী-শেওড়া-আবদুল্লাহপুর। রুট নম্বর ৩১ : কাচপুর-যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান-পল্টন-শাহবাগ-ফার্মগেট-শেওড়াপাড়া-মিরপুর ১০-ভাসানটেক। রুট নম্বর ৩২ : ডেমরা ঘাট-কোনাপাড়া-মৃধাবাড়ি-সায়েদাবাদ-জয়কালী মন্দির-ইত্তেফাক-শাপলা চত্বর-শাহবাগ-ফার্মগেট-আসাদগেট-শ্যামলী-টেকনিক্যাল-মিরপুর১-মিরপুর চিড়িয়াখানা। রুট নম্বর ৩৩ : নারায়ণগঞ্জ/জুরাইন-যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান-পল্টন-কাকরাইল-মগবাজার-সাতরাস্তা-মহাখালী-কাকলী-জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার-কালশী-মিরপুর-১০, মিরপুর-১-মিরপুর দিয়াবাড়ি। রুট নম্বর ৩৪ : সাইনবোর্ড-যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান-পল্টন-শাহবাগ-সায়েন্স ল্যাব-আসাদগেট-শ্যামলী-টেকনিক্যাল-মিরপুর-১-মিরপুর-১০-মিরপুর-১২। সাব আরবান ক্লাস্টার নর্থ অংশের এক হাজার ৮৯টি বাস ৩৫-৩৭ নম্বর রুটে চলবে। পুরনো ৪০টি রুট ভেঙে এই তিনটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ৩৫ : শ্রীপুর/কাপাসিয়া/গাজীপুর/মৌচাক/কোনাবাড়ি/গাজীপুর চৌরাস্তা/আবদুল্লাহপুর। রুট নম্বর ৩৬ : গোড়াশাল/কালীগঞ্জ/মীরের বাজার/আবদুল্লাহপুর। রুট নম্বর ৩৭ : কালিয়াকৈর/ চন্দ্রা/আশুলিয়া/দোহার/আবদুল্লাহপুর। নর্থ-ওয়েস্ট অংশে ৯৯২টি বাস ৩৮ থেকে ৪০ নম্বর রুটে চলাচল করবে। পুরনো ৩০টি রুট ভেঙে এই তিনটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ৩৮ : নন্দনপার্ক-ইপিজেড-বাইপাইল-ফ্যান্টাসি কিংডম-আশুলিয়া-দোহার-বেড়িবাঁধ-মাজার রোড-মিরপুর। রুট নম্বর ৩৯ : চন্দ্রা-নন্দন পার্ক-ইপিজেড-বাইপাইল-নবীনগর-সাভার-হেমায়েতপুর। রুট নম্বর ৪০ : পাটুরিয়া-মানিকগঞ্জ-কালামপুর-ধামরাই-নবীনগর-সাভার-হেমায়েতপুর। সাউথ অংশে পরিবহনগুলো ৪১ ও ৪২ নম্বর রুটে চলবে। এতে পরিবহনের সংখ্যা থাকবে ৯৯টি। পুরনো ৫টি রুট ভেঙে এই দুটি রুট করা হয়েছে। রুট নম্বর ৪১ : ঝিলমিল-রুহিতপুর-নবাবগঞ্জ-দোহার-বান্দুরা-হরিরামপুর। রুট নম্বর ৪২ : হরিরামপুর-শ্রীনগর-মাওয়া-লৌহজং। ঢাকা চাকা ক্লাস্টারে ৫২টি বাস চলবে। রুট হবে নতুন বাজার-পুলিশ প্লাজা। এই বাসগুলো এখন এই রুটেই চলছে। ২০১৭ সালের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে নগরীতে নিবন্ধিত বাসের সংখ্যা ৩০ হাজার ২৭৪টি। এখন তা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় বিদ্যমান বাসগুলোর মূল্যায়নের মাধ্যমে কোম্পানিগুলোতে মালিকানার ভাগ নির্ধারণ করা হবে। এসব বাস ও মিনিবাস স্ক্র্যাপ করা হলে সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে। এ ছাড়া নতুন বাস সংগ্রহের জন্য ৪-৫ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হবে।

বুয়েটের অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল হক বলেন, “আমরা ২০১০ সালে একই মডেলে ‘সূচনা’ নামে প্রকল্প পরিকল্পনা করেছিলাম। সেখান থেকে ডাটা নেওয়ার সুযোগ আছে। এ প্রকল্প যদি সফল করতে হয় তবে বিটিআরসির মতো একটি রেগুলেটরি অথরিটি করতে হবে। আমাদের উদ্যোগের কমতি নেই। কিন্তু দুর্দশার জন্য যদি কাউকে দায়ী করতে হয় তবে সেটা হলো নজরদারি তথা মনিটরিংয়ের ঘাটতি। মনিটরিং না করে এটা সফল করা যাবে না।’

সর্বশেষ খবর