মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্থল ও নৌপথে বাড়ছে মাদক চোরাচালান

জড়িতদের তালিকা হচ্ছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে টহল কমায় অসন্তোষ

রুহুল আমিন রাসেল

স্থল ও নৌপথে বাড়ছে মাদক চোরাচালান

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে স্থল ও নৌপথে বাড়ছে মাদক চোরাচালান। এর সঙ্গে বিট বা খাটালে মানব পাচার, অবৈধ অস্ত্র ও সোনা চোরাচালান হচ্ছে ফ্রি স্টাইলে। সীমান্ত এলাকায় বন্ধ হয়নি চোরাচালান। বরং মাদকবিরোধী অভিযান ও টহল কমেছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এই ঢিলেমিতে চরম অসন্তোষ প্রশাসনের। এমন পরিস্থিতিতে মাদক পাচারে জড়িত ও অর্থ বিনিয়োগকারীদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে খুলনা বিভাগীয় প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ও চোরাচালান প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আঞ্চলিক টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘খুলনা বিভাগের বেশ কিছু স্থল ও নৌপথে মাদক চোরাচালান বেড়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান বন্ধ হয়নি। করোনাকালে মাদকবিরোধী অভিযান ও টহলে ঢিলেমি ছিল। কিন্তু এখন আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এমনকি মাদক পাচারে যারা অর্থ বিনিয়োগ করছে, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আবার যারা মাদক কেনাবেচা ও গ্রহণ করছে, তাদেরও তালিকা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। খুলনা বিভাগ মাদকমুক্তকরণে প্রশাসন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।’ এর আগে খুলনায় চোরাচালান প্রতিরোধ-সংক্রান্ত আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের সর্বশেষ সভা হয় ২২ অক্টোবর। সভার কার্যবিবরণী ২ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসক, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্য সব সংস্থার প্রতিনিধি ও সদস্যরা বিট বা খাটাল বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে জোর সুপারিশ করেন। এসব বিট বা খাটাল থেকে পাওয়া রাজস্বের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ পরিচালন খরচ অনেক গুণ বেশি। এসব বিট বা খাটালে মানব পাচার, অবৈধ অস্ত্র, সোনা ও মাদক চোরাচালান হয়। বিট বা খাটাল বন্ধে জুলাইয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পত্র দিলেও কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। করোনা পরিস্থিতিতে একাধিক স্থানে হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানিরা সংগঠিত হতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সতর্ক থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

কার্যবিবরণীতে বলা হয়, চোরাচালান প্রতিরোধে নৌপথে অভিযান পরিচালনা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জেলাভিত্তিক মাদকসেবী এবং বিক্রেতাদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করা প্রয়োজন। আবার সীমান্তপথে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য অবাধে যাতে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। খুলনা বিভাগকে মাদকমুক্ত করতে প্রাথমিকভাবে প্রতিটি জেলার একটি উপজেলা চিহ্নিত করতে হবে। উপজেলা,  ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। যেসব জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র নেই, সেখানে তা স্থাপন করতে হবে। কার্যবিবরণীতে বলা হয়, শুল্ক গোয়েন্দা, খুলনা ও যশোর কাস্টমস এবং মেহেরপুর টাস্কফোর্স চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য স্থল ও নৌপথে কোনো টহল পরিচালনা করেনি। আবার কিছু সংস্থা টহল করার পরও চোরাই পণ্য ও জড়িত ব্যক্তিকে আটক করতে পারেনি। কার্যকর অভিযান ও টহল পরিচালনা করতে প্রয়োজনে আগেই গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরস্পর চোরাচালান তথ্য বিনিময় করতে পারে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলা টাস্কফোর্স তল্লাশিচৌকি বসিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা না করার সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। তাই যেসব জেলা ও সংস্থা টহল পরিচালনা করেনি, তাদের টহল কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে পাচারের উদ্দেশ্যে যেন কোনো আবাসিক হোটেলে নারী ও শিশুদের পাচারকারীরা রাখতে না পারে, সে জন্য টাস্কফোর্স ও সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে নজরদারি অব্যাহত রাখতে বলেছে প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর