মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অগ্রগতি নেই মডেল মসজিদ নির্মাণে

৫৬০টির মধ্যে আড়াই বছরে মাত্র পাঁচটির চতুর্থ তলা ছাদ ঢালাই সম্পন্ন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ ডিসেম্বরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অগ্রগতি নেই মডেল মসজিদ নির্মাণে

অগ্রগতি নেই ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে। আগামী ডিসেম্বরে শেষ হচ্ছে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও গত আড়াই বছরে কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। এখন পর্যন্ত মাত্র পাঁচটি মসজিদের চতুর্থ তলা ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১০০টি মসজিদের জন্য এখনো জমির জায়গা বুঝে পায়নি ইসলামিক ফাউন্ডেশন। প্রকল্পটিতে কিছু স্থানে এখনো নকশা চূড়ান্ত হয়নি। প্রকল্পটি শেষ হতে আরও দুই বছর সময় লাগতে পারে। জানা যায়, আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় একটি করে অত্যাধুনিক মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে এপ্রিল ২০১৭ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মেয়াদে বাস্তবায়নের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে প্রত্যাশিত সৌদি অনুদান না পাওয়ায় নিজস্ব ব্যয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে সংশোধন করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চার তলা ও উপজেলায় তিন তলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চার তলাবিশিষ্ট প্রকল্পের শুরু থেকেই ভূমি জটিলতায় বিভিন্ন স্থানে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে এসব মসজিদ নির্মাণে প্রস্তাবিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা থাকবে সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের অনুদান। তবে সৌদি অনুদান মেলেনি মডেল মসজিদ নির্মাণে। এসব মসজিদ সরকারি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে।

ইফা সূত্র জানায়, পাঁচটি মসজিদের চতুর্থ তলা ছাদ ঢালাই হয়েছে। ৩৩টির তৃতীয় তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। ২৮টি দ্বিতীয় তলা এবং ৩৪টির প্রথম তলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। ১৫৫টি মডেল মসজিদের পাইল ক্যাপ, ফুটিং ঢালাই চলছে। এ ছাড়া নিচতলার কলাম ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৫৭টি  মসজিদের লো আউট, টেস্ট পাইল ঢালাই ও লোড টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া বালু ভরাট কাজ চলছে। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে বড় অংকের বরাদ্দ প্রয়োজন। ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭৮৭ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। টাকার অভাবে প্রকল্পের কাজের গতি বাড়ছে না। ফলে নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। আবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লেও নির্ধারিত ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। করোনার প্রভাবে মডেল মসজিদে চলতি বছরে কাক্সিক্ষত বরাদ্দ মেলেনি। চলতি অর্থবছরে প্রকল্পটিতে চাহিদার অর্ধেক টাকাও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। করোনার প্রভাবেও কাজের ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি গবেষণা ও দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজ, শিশুশিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন, প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ব্যবস্থা থাকবে। জানা যায়, ২০২১ সালের ১৭ মার্চের মধ্যে অন্তত ৪০টি মসজিদ নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে ব্যবহার উপযোগী করাতে চাইছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। বাকিগুলো অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে কাজ চলমান রাখা হবে। পার্বত্য এলাকায় জনসংখ্যা কম বিবেচনায় মসজিদের আয়তন ছোট করা হতে পারে। এসব মসজিদে প্রতিদিন ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৪০ জন পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ জন নারীর নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। মসজিদগুলো থেকে প্রতি বছর ১৪ হাজার হাফেজ তৈরির ব্যবস্থা থাকবে। আরও থাকবে ইসলামিক নানা বিষয়সহ প্রতি বছর ১ লাখ ৬৮ হাজার শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা। ২ হাজার ২৪০ জন দেশি-বিদেশি অতিথির আবাসন ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হবে প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবর রহমান জানান, করোনার প্রভাবে কাজে ধীরগতি হয়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও অন্তত দুই বছর সময় প্রয়োজন। নির্মাণকাজের ব্যয় বাড়তে পারে। ইতিমধ্যে প্রকল্প সংশোধনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর