মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে বিপাকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

আকতারুজ্জামান

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় এবার ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা হবে না। সব শিক্ষার্থীই অটোপ্রমোশন পেয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে। তবে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা।

অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের কথা বলা হলেও নম্বর দেওয়ার নিয়ম রাখা হয়নি। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে চারটি সূচক ‘অতি উত্তম, উত্তম, ভালো ও অগ্রগতি প্রয়োজন’ রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, ছাত্রছাত্রীদের এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে উত্তীর্ণের ব্যাপারে রোল নম্বর বিবেচনা করতে হয়। এ ক্ষেত্রে কীভাবে রোল নম্বর নির্ধারণ করা হবে- এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

তথ্যমতে, প্রতিটি অ্যাসাইনমেন্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর, শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপলোড করা থাকে। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এসব অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের ফটোকপি করে সরবরাহ করায় স্কুলগুলোর খরচ হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। ফলে বিপাকে পড়েছেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। কারণ তাদের বেতন পরিশোধ করা হয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে।

রাজধানীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা প্রতিবেদককে বলেন, অ্যাসাইনমেন্ট পেপার স্কুল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শিক্ষক এমপিওভুক্ত নন। গত ছয় মাসে শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি সংগ্রহ করতে না পেরে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

কিন্তু প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা। তবে করোনার কারণে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। মাউশির নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান ও জমা কার্যক্রম চলবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা  ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে মেধা যাচাই হচ্ছে না। কারণ এটি শিক্ষার্থীরা করছে না। তা ছাড়া অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি ব্যয়সাপেক্ষ। এটি নিয়ে ব্যবসা করছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব অ্যাসাইনমেন্টের প্রশ্নের উত্তর বাজারে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও মিরপুর সিদ্ধান্ত হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীর মগবাজার মধুবাগ শের ই বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আবদুস সাত্তার বলেন, এ প্রতিষ্ঠানে ৩৪ জন শিক্ষক নন-এমপিওভুক্ত। টিউশন ফি আদায় করতে না পারায় শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট ফটোকপি করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্কুল পর্যায়ে অ্যাসাইনমেন্ট কার্যকর হচ্ছে না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থিম। আবদুস সাত্তার বলেন, অ্যাসাইনমেন্টের পরিবর্তে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে বাসায় প্রশ্ন পাঠিয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা নিলেও মূল্যায়ন তুলনামূলক ভালো হতো। এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক প্রতিবেদককে বলেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে অ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতি বেশ কার্যকর হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর