শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাণিজ্যে টার্গেট ইন্দোনেশিয়া

২৬ কোটি ভোক্তার বাজারে ৩০০ পণ্যে সুবিধা চায় বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ভুটানের পর এবার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তির (পিটিএ) জন্য ইন্দোনেশিয়াকে বেছে নিয়েছে সরকার, যার প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। দুটি দেশই চুক্তির খসড়া একে অপরের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে, যেটি চূড়ান্ত করতে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে জোরেশোরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের গুরুত্ব দেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ইন্দোনেশিয়ার ২৬ কোটি ভোক্তার বাজার। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়ার নজর বাংলাদেশের ১৬ কোটি ভোক্তার দিকে। দুই দেশের মধ্যে পিটিএ চুক্তি হলে প্রায় ৪২ কোটি ভোক্তার বাজার তৈরি হবে, যেখানে উভয় দেশ তালিকাভুক্ত পণ্যে অবাধ বাণিজ্য-সুবিধা পাবে। বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান বাণিজ্য জোটের অন্যতম সদস্য। এই দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির মধ্য দিয়ে আসিয়ানের অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।’ কর্মকর্তারা জানান, পিটিএর জন্য উভয় দেশ এরই মধ্যে খসড়া বিনিময় করেছে। এখন প্রাথমিক পণ্য তালিকা বাছাইয়ের কাজ চলছে। পণ্য তালিকা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে একটি সভাও হয়েছে।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয়েই উভয়ের কাছে প্রায় ৩০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়ে প্রাথমিক পণ্য তালিকা হস্তান্তর করেছে। বাংলাদেশের তালিকায় তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধ, ফার্নিচার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্যসহ দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতগুলো রয়েছে। অপরদিকে ইন্দোনেশিয়া বাংলাদেশের বাজারে ২৭১টি পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ আরও ৩৩টি পণ্যে ৫০ শতাংশ এবং ৫টি পণ্যে ৪০ শতাংশ শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তালের তেল, নারকেল তেল, উদ্ভিজ চর্বি, মাছ, প্রাকৃতিক মধু, কোকো, বালি, পাথর, জিপসাম, চুনাপাথর, কয়লা, পেট্রোলিয়াম তেল, কাঠ ও কাঠের পণ্য, রেল, অ্যালুমিনিয়াম, এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, মোবাইল ও মোবাইল আনুষঙ্গিক, কম্পিউটার মনিটর, টেলিভিশন এবং এর যন্ত্রাংশ, এলইডি ল্যাম্প, সৌর মডিউল, প্রিন্টার, বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ, নারকেল, সুপারি, বাদাম, শুকনো ফল, কফি, চা, চাল এবং বিভিন্ন মশলা।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ৩০১টি পণ্য তালিকার বিপরীতে ইন্দোনেশিয়া যে ৩০৯টি পণ্যের তালিকা দিয়েছে, এর মধ্যে ১৪৪টি পণ্যে ২৫ শতাংশ, ৮ পণ্যে ১৫ শতাংশ, ৬৯ পণ্যে ১০ শতাংশ, ৬০ পণ্যে ৫ শতাংশ, ১৬ পণ্যে ১ শতাংশ এবং ৯ পণ্যে শূন্য শুল্ক রয়েছে বাংলাদেশে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইন্দোনেশিয়ার তালিকার ১৫৭টি পণ্য রয়েছে, যেগুলো সাফটা চুক্তির আওতায় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে ০ থেকে ৫ শতাংশ শুল্ক সুবিধা ইতিমধ্যে দিচ্ছে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়াকে সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব পণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন কর্মকর্তারা। অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উভয় দেশের প্রাথমিক পণ্য তালিকা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। চূড়ান্ত করার আগে ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। উৎপাদক এবং দেশের আমদানি ও রপ্তানিকারকদের মতামত নিয়েই চূড়ান্ত পণ্য তালিকা করা হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া উভয় দেশই একই ধরনের পণ্য রপ্তানি করে। দুই দেশেরই প্রধান রপ্তানিপণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক অন্যতম। আবার ইন্দোনেশিয়ায় তৈরি পোশাকের চাহিদার বড় অংশই স্থানীয় উৎপাদন থেকে জোগান দেওয়া হয়। এসব বিবেচনায় দেশটির সঙ্গে পিটিএ চুক্তি লাভজনক হবে কি না তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘চুক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে হয়তো এটি ততটা লাভজনক হবে না। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে আমরা এই চুক্তি থেকে সুফল পেতে পারি। দেশটির ২৬ কোটি ভোক্তার বাজার রয়েছে, যেখানে তৈরি পোশাক ছাড়াও ওষুধসহ সম্ভাবনাময় আরও অনেক পণ্য রয়েছে, যেগুলো রপ্তানির বড় গন্তব্য হতে পারে ইন্দোনেশিয়া।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০১৭ সালে ভারত মহাসাগরীয় রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) সম্মেলনের ফাঁকে জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য বিষয়ে এক বৈঠক হয়। সেখানে দুই দেশের মধ্যে পিটিএ চুক্তির বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। পরবর্তী সময়ে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে দুই নেতা পিটিএ চুক্তির বিষয়ে সম্মতি দেন। দুই রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সেই প্রাথমিক আলোচনাকে সূত্র ধরে চুক্তিটি চূড়ান্ত পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ইন্দোনেশিয়ার অনুকূলে রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ইন্দোনেশিয়ায় ৫৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির বিপরীতে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য আমদানি করেছে।

সর্বশেষ খবর