বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বেড়েছে সংক্রমণ কমেছে সচেতনতা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বেড়েছে সংক্রমণ কমেছে সচেতনতা

তাপমাত্রার পারদ নিচের দিকে নামতেই দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার বাড়তে শুরু করেছে। বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। আক্রান্ত বাড়লেও, স্বাস্থ্যবিধি মানায় চরম অবহেলা দৃশ্যমান। মাস্ক ছাড়াই বাজার, অফিস, গণপরিবহনে চলাচল করছে মানুষ। করোনার থাবা থেকে বাঁচতে শীতে বাড়তি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। ২৪ অক্টোবর নমুনা টেস্ট হয়েছিল ১০ হাজার ৯৯৮ টি, করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১ হাজার ৯৪ জনের। সর্বনি¤œ সংক্রমণ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তিন সপ্তাহ পার হতেই গতকাল করোনা শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ১৫ হাজার ৯৯০ জনের করোনা টেস্টে পজেটিভ শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ২১২ জন। মারা গেছেন ৩৯ জন। করোনা সংক্রমণ বাড়লেও সতর্কতাই আগ্রহ নেই মানুষের। ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বলা হলেও মাস্ক ছাড়াই রাস্তাঘাট, অফিস, শপিংমলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষ। চলছে জনসমাবেশ, বিয়ে, পিকনিক, জন্মদিনসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে নেই হ্যান্ডস্যানিটাইজারের ব্যবস্থা। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি হলেও নিয়ম মানছে না কেউ।

স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়ছে বেশিরভাগ মানুষ। কারওয়ান বাজার কাঁচাবাজারে দেখা যায়, মাস্কের কোনো বালাই নেই। মাস্ক ছাড়াই বেচাকেনা করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। মাস্ক থুঁতনিতে রেখে কেনাকাটা করছিলেন ফয়জুল ইসলাম। করোনা ঝুঁকির বিষয়ে জানেন কি না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মাস্ক তো পরেই আছি। কিন্তু সবসময় পরে থাকলে গরম লাগে। সারাক্ষণ পরে থাকা অসুবিধা। করোনার ভয় তো লাগে কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে বাজারে এসেছি। হাত না ধুয়ে কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহার না করেই ফুটপাথের পাশে চলছে খাওয়া-দাওয়া। দুই মাস সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ভাইরাসের কারণে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৯ জনের, যা গত ৫৮ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। একই সময়ে নতুন করে ২ হাজার ২১২ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৭৬ দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। গতকাল নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ হাজার ৯৯০টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২১২ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৪ জনের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। গত একদিনে ৩৯ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৪ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৭৪৯ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৫ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ ও মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত একদিনে মারা যাওয়া ৩৯ জনের মধ্যে ৩০ জন ছিলেন পুরুষ ও ৯ জন নারী। সবারই মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে। বয়স বিবেচনায় মৃতদের মধ্যে ২৪ জনই ছিলেন ষাটোর্ধ্ব। এ ছাড়া ১০ জন পঞ্চাশোর্ধ্ব, ২ জন চল্লিশোর্ধ্ব, ১ জন ত্রিশোর্ধ্ব, ১ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর ও ১ জনের বয়স ছিল ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। এর মধ্যে ২২ জন ঢাকা, ৫ জন চট্টগ্রাম, ৫ জন রংপুর, ৩ জন রাজশাহী, ২ জন বরিশাল ও ২ জন ছিলেন সিলেট বিভাগের বাসিন্দা। এদিকে সংক্রমণ বাড়লেও অধিকাংশ রোগী হাসপাতালমুখী না হওয়ায় গতকালও দেশের কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর ১১ হাজার ৪৫৩টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৮ হাজার ৮১৪টি শয্যা খালি ছিল। এ ছাড়া ৫৫৯টি আইসিইউর মধ্যে খালি ছিল ২৮২টি। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ও ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

সর্বশেষ খবর