বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বদলে যাবে গ্রামীণ রাস্তাঘাট

♦ ৬ থেকে ১৮ ফুট বাড়বে সড়কের প্রশস্ততা ♦ স্থায়িত্ব হবে কমপক্ষে ১০ বছর ♦ চলবে ভারী যানবাহন, কমবে বাঁক ♦ বার্ষিক খরচ বাড়বে ২৫ শতাংশ

শামীম আহমেদ

বদলে যাবে গ্রামীণ রাস্তাঘাট

‘শহরের সুযোগ-সুবিধা নিতে হবে গ্রামে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ভাবনা সামনে রেখে এবার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ পরিকল্পনা নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনা অনুযায়ী সব গ্রামীণ রাস্তা প্রশস্তের পাশাপাশি ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করা হবে। সেই সঙ্গে ডিজাইন পরিবর্তনের মাধ্যমে এসব রাস্তার স্থায়িত্বকাল করা হবে কমপক্ষে ১০ বছর। বাঁক কমিয়ে সড়কগুলো করা হবে সোজা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর কারিগরি সহায়তায় হালনাগাদকৃত ‘রোড ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড’ অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ডিজাইনটি অনুমোদন হলেই ধারাবাহিকভাবে বদলাতে শুরু করবে গ্রামীণ রাস্তাঘাট।

জানা গেছে, সরকারের ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মপরিকল্পনায় দেশব্যাপী ৮৭ হাজার ২৩০টি গ্রামকে উন্নত ও টেকসই সড়ক যোগাযোগ দ্বারা সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গতকাল (১৭ নভেম্বর) একনেক সভায়ও সারা দেশের গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণে একটি মহাপরিকল্পনা তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারা দেশের গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বর্তমানে সড়ক ডিজাইনের ক্ষেত্রে ২০০৪ সালে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক গেজেটকৃত ‘রোড ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড’ অনুসরণ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। সে ডিজাইন অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সব গ্রামীণ সড়ক সর্বোচ্চ ১২ ফুট প্রশস্ত করে তৈরি হয়েছে। সড়কে গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যানজট ও গ্রামীণ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল শুরু করায় দ্রুত ভেঙে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুয়েটের সহায়তায় নতুন ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে এলজিইডি। নতুন ডিজাইনে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দৈনিক ১০১ থেকে ৫০০ মাঝারি যানবাহন চলাচলকারী সড়কগুলোকে ১২ ফুট থেকে বাড়িয়ে ১৮-২০ ফুট, দৈনিক ৫০১ থেকে সহস্রাধিক যানবাহন চলাচলকারী (ভিন্ন ভিন্ন স্লাবে) সড়কগুলোকে ২২ ফুট থেকে ৩৬ ফুট পর্যন্ত প্রশস্তের  প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যান চলাচলের সংখ্যা ও মাটির ভার বহন ক্ষমতার ভিত্তিতে আগের ডিজাইনে সড়কের ৮টি স্ট্যান্ডার্ড থাকলেও নতুন ডিজাইনে তা বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে।

এলজিইডি-সূত্র জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন সড়কগুলোর মধ্যে দৈনিক সহস্রাধিক ভারী যানবাহন চলাচলকারী সড়ক আছে ৩৮৭ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৮৮০ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ৭৫১ থেকে ১ হাজার ভারী যানবাহন, ৪ হাজার ২২৫ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ৫০১ থেকে ৭৫০টি ভারী যানবাহন, ৫ হাজার ৬৩০ কিলোমিটার সড়কে ৪০১ থেকে ৫০০ মাঝারি যানবাহন, ৬ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ৩০১ থেকে ৪০০ মাঝারি যানবাহন, ১২ হাজার ৩২০ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ২০১ থেকে ৩০০ মাঝারি যানবাহন, ৩৭ হাজার ১০০ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ১০১ থেকে ২০০ মাঝারি যানবাহন এবং ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪৭১ কিলোমিটার সড়কে দৈনিক ১০০-এর কম হালকা যান চলাচল করছে। এ ছাড়া ২ লাখ ৩২ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো এলজিইডির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী ৬৩ হাজার ৯৪০ কিলোমিটার উপজেলা ও ইউনিয়ন পাকা সড়ক রয়েছে যার উল্লেখযোগ্য অংশ গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থায় কোর নেটওয়ার্ক হিসেবে ভূমিকা পালন করছে। বিগত তিন দশকে নির্মিত এসব সড়কের বড় অংশেরই ডিজাইন লাইফ শেষ হয়ে যাওয়ায় পুনর্নির্মাণ প্রয়োজন। খসড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রতি বছর এলজিইডির ৭ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার কিলোমিটার গ্রামীণ কাঁচা সড়ক নির্মাণ ও ডিজাইন লাইফ শেষ হওয়া ৩ হাজার কিলোমিটার পাকা সড়ক আপগ্রেড করা হবে। আপগ্রেডের ক্ষেত্রে ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক বিদ্যমান ১২ থেকে ১৮ ফিটে সম্প্রসারণ ও অবশিষ্ট ১ হাজার কিলোমিটার সড়ক ২০ ফুট, ২২ ফুট ও ২৪ ফুট প্রস্থে সম্প্রসারণ প্রয়োজন হবে। বাঁক সহজীকরণ, ব্রিজ অ্যাপ্রোচ উন্নয়নসহ এসব কাজে জমি অধিগ্রহণে প্রতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সার্বিক বিবেচনায় প্রতি বছর শতকরা ২৫ ভাগ ব্যয় বাড়বে। তবে প্রস্তাবিত ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড অনুমোদন হলে সড়ক টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সড়কের লাইফ সাইকেল কস্ট কমে যাবে। সড়ক ভালো হওয়ায় অযান্ত্রিক যানবাহনে প্রতি কিলোমিটারে প্রতিদিন গড়ে ২ টাকা ও যান্ত্রিক যানবাহনে গড়ে ৫ টাকা খরচ কমে যাবে। ফলে সড়ক সম্প্রসাণের বাড়তি বিনিয়োগ দুই বছরের কিছু বেশি সময়ে উঠে আসবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)-এর পরিকল্পনা, ডিজাইন ও গবেষণা ইউনিটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুল আজিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগের ডিজাইনে আমরা চওড়া রাস্তা করতে পারতাম না। উপজেলা পর্যায়ে এখন প্রচুর গাড়ি হয়েছে। ভারী যানবাহনও চলছে। যানজট লেগে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ রাস্তাঘাট উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। এ জন্য বুয়েটকে দিয়ে নতুন গাইডলাইন করা হয়েছে। এ ডিজাইন অনুমোদন হলে সড়কে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা ও মাটির ভার বহন ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে সড়কের ডিজাইন বদলাতে পারব। পুরুত্বও বাড়াতে পারব। সড়ক টেকসই হবে। পরিকল্পনা কমিশন কিছু পরামর্শ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী সংশোধন করে জমা দেওয়া হয়েছে। ২৬ নভেম্বর এটা নিয়ে বৈঠক আছে। একই ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি হওয়ায় ভারী ও অধিক যান চলাচলকারী সড়কগুলো এক-দুই বছরের মধ্যেই ভেঙে যায়। নতুন ডিজাইন অনুমোদন হলে পরবর্তী সংস্কার ও নতুন রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে রাস্তা তৈরি হবে। রাস্তাগুলো কমপক্ষে ১০ বছর টেকসই হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর