বুধবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ধর্মীয়-জাতিগত হামলা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

যুক্তরাষ্ট্রে ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত বিদ্বেষমূলক অপরাধ গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে গত বছর। সোমবার ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিশন তথা এফবিআই প্রকাশ করেছে উদ্বেগজনক এ তথ্য। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ ধরনের হেইট ক্রাইম সংঘটিত হয় ৭ হাজার ৩১৪টি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ১২০। গত ১২ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরই সবচেয়ে বেশি হেইট ক্রাইম সংঘটিত হয়েছে এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী। গত বছর ৫১ জন নিহত হয়েছে বিদ্বেষমূলক আক্রমণে। এর মধ্যে টেক্সাসের এল পাসো ওয়ালমার্টে ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এফবিআই বলেছে হিসপ্যানিক সম্প্রদায়কে টার্গেট করে এহেন হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। ১৯৯০ সালের পর এ ধরনের ঘৃণা থেকে হত্যাকান্ডের ঘটনা এটিই সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল। ব্যক্তির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ পরিচিতির পরিপ্রেক্ষিতে হামলার শিকার হলেই তাকে ‘হেইট ক্রাইম’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গত বছরের বিদ্বেষমূলক আক্রমণের শতকরা ১৪টির ভিকটিম হয়েছে জুইশ সম্প্রদায়। মুসলমান, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানরাও বাদ যায়নি। গতবছর নিউইয়র্ক সিটিতেও ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাসিয়ো পুলিশের টহল বাড়িয়েছিলেন। নির্জন স্থান এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আশপাশে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এফবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী আগের বছরের চেয়ে গত বছর আফ্রিকান-আমেরিকানদের ওপর হামলার ঘটনা কিছুটা কমেছে। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৩০। আগের বছর তা ছিল ১ হাজার ৯৪৩। তবে হিসপ্যানিক সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ২০১৮ সালের চেয়ে গত বছর বেড়েছে। সে সংখ্যা ৫২৭। আগের বছর ছিল ৪৮৫। যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ সহস্রাধিক সংস্থার মধ্যে মাত্র শতকরা ১৫টির কাছে থেকে এফবিআই এসব হেইট ক্রাইমের তথ্য পেয়েছে। হেইট ক্রাইমের তথ্য নথিভুক্ত করতে অনেক সংস্থার সীমাহীন উদাসীনতায় হতাশা ব্যক্ত করেছে বিচার বিভাগ। ২০১৬ সালে খ্যাতনামা একটি সংবাদ সংস্থার অনুসন্ধানে উদঘাটিত হয় যে, সারা আমেরিকার অন্তত ২ হাজার ৭০০ সংস্থা হেইট ক্রাইমের তথ্য এফবিআইকে পরিবেশন করেনি ২০১০ সাল থেকে। এ জন্য প্রতি বছর কতটি গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে ধর্ম ও জাতিগত বিদ্বেষমূলকভাবে তা জানা সম্ভব হয় না। কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদ্বেষী বক্তব্য থেকেই হেইট ক্রাইম বেড়েছে আমেরিকায়। নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের রিগোপার্কে ৬ নভেম্বর নিজেদের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের পেছনের পার্কিং লটে দুই শিশু সন্তানসহ এক মুসলমান দম্পতি আক্রান্ত হন প্রতিবেশী শ্বেতাঙ্গ দম্পতি কর্তৃক। নিয়ামত তাহা নামের ওই মুসলিম মহিলা হিজাব পরিহিত ছিলেন এবং এটিই হচ্ছে তার অপরাধ। যার শিকার হন তাহার স্বামী। ওই শ্বেতাঙ্গ দম্পতি তাহার হিজাব ধরে টানাটানি এবং মুসলমানদের উদ্দেশ্য করে অশ্লীল গালি দিতে থাকলে দুই শিশু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব তার স্বামী কাছে এসে ওই শ্বেতাঙ্গ দম্পতিকে অনুরোধ করেন অযথা কটু কথা না বলতে। এরপরই জিসেলে ডিজিসাস (৩৫) এবং তার স্বামী চড়াও হন তাহার স্বামীর ওপর। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় পাকা পার্কিং লটে। এরপর সজোরে লাথি মারতে থাকেন উভয়ে। রক্তাক্ত হন তাহার স্বামী। শিশুরা আর্ত-চিৎকার করতে থাকে ভয়ে। উল্লেখ্য, এর আগে একই দম্পতিকে ২৭ সেপ্টেম্বর হুমকি দেওয়া হয় এই এলাকা ছেড়ে যেতে। অন্যথায় তাদেরকে হত্যার হুমকি দেয় জিসেলে ডিজিসাস ও তার স্বামী। আক্রমণে তাহার স্বামী আহত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনা সম্পর্কে নিকটস্থ পুলিশ প্রেসিঙ্কটে মামলা হয়েছে। ১৩ নভেম্বর জিসেলে ডিজিসাসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। ১০ হাজার ডলার বন্ডে সে জামিন পেয়েছে। তবে তার স্বামী এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ ঘটনায় কমিউনিটিতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় রবিবার কুইন্স বরো হল প্রাঙ্গণে এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে বাংলাদেশি আমেরিকান মাজেদা এ উদ্দিনের আহ্বানে। ‘স্যাফেস্ট’ (সাউথ এশিয়ান ফান্ড ফর এডুকেশন, স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং) নামক একটি সংস্থার ব্যানারে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে কুইন্স বরোর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাভন রিচার্ডসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, ১৯২ ভাষার মানুষেরা বাস করছেন এই কুইন্সে। সবার মধ্যেকার সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটি লিডার ফাহাদ সোলায়মানও ক্ষুব্ধচিত্তে বক্তব্য রাখেন ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক এহেন হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে। এ সময় সেখানে ছিলেন স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড ওয়েপ্রিন, স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার মোহাম্মদ সাবুল উদ্দিন এবং ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারসহ নেতৃবৃন্দ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর