বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রয়োজন উত্তাল গণজাগরণ

-মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

প্রয়োজন উত্তাল গণজাগরণ

দেশের ওপর নতুন করে ‘পাকিস্তানের ভূত’ আর ভোটাধিকার-বর্জিত, জবরদস্তিমূলক, গণতন্ত্রহীন, ফ্যাসিস্ট ধারার শাসন-শোষণ ব্যবস্থা চেপে বসেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তার মতে, ৯৯ ভাগ জনগণের জীবনে চেপে বসেছে শোষণ-বঞ্চনা-বৈষম্যের নিষ্ঠুর ও অমানবিক এক অস্তিত্ব। এই অবস্থা বদলে দিতে ‘জাতীয়তাবাদ-সমাজতন্ত্র-গণতন্ত্র-ধর্মনিরপেক্ষতার’ নীতির ভিত্তিতে দেশ চালাতে উত্তাল গণজাগরণ ও সর্বাত্মক গণঅভ্যুত্থান চায় কমিউনিস্ট পার্টি। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন দেশের শীর্ষ বাম নেতা ও সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি বলেন, মতাদর্শ-কেন্দ্রিক বিবেচনাকে প্রাধান্য না দিয়ে নিছক ক্ষমতা-কেন্দ্রিক এই রুগ্ন রাজনীতির খেসারত দিতে হচ্ছে জাতি ও জনগণকে। এই সংকট উত্তরণে দেশে বামপন্থি-প্রগতিশীল-প্রকৃত গণতান্ত্রিক, সৎ মানুষের ঐক্যবদ্ধ বিকল্প শক্তি-সমাবেশের উত্থান ঘটাতে হবে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আদর্শিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার না দিয়ে নিছক ক্ষমতা-কেন্দ্রিক বিবেচনা দ্বারা পরিচালিত হওয়ার মতো ক্ষমার অযোগ্য ভুল আর করতে দেওয়া যাবে না।

ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, শাসককূল রাষ্ট্রক্ষমতাকে লুটপাটের সহজ পথ ও পন্থায় পরিণত করেছে। তারা তাদের রাজনীতিকে ব্যবসাতে পরিণত করেছে। দেশের বড় বুর্জোয়া দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতাকে লুটপাটের সহজ পথ বানিয়ে ফেলেছে। সেখানে লুটেরাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। লুটপাটের স্বার্থে পরিচালিত তাদের এহেন রাজনীতিতে নীতি-নৈতিকতা-আদর্শের কোনো মূল্য নেই। লুটপাটকে তাদের কর্মকান্ডের মূল উদ্দেশ্যে পরিণত করেছে।

দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টির এই সভাপতির মতে, রাষ্ট্রক্ষমতার বিষয়টি হলো, রাজনীতির একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে নীতি-আদর্শের বিষয়টি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিন্তু ক্ষমতা-কেন্দ্রিক রাজনীতির ক্ষেত্রে এক নম্বরে উঠে আসে রাষ্ট্রক্ষমতা এবং নীতি-আদর্শ হয়ে পড়ে দুই নম্বরের বিবেচ্য বিষয় যা গদির লোভে হয়ে ওঠে পরিত্যাগযোগ্য। আসলে ৯৯ ভাগ মানুষের দারিদ্র্যের বিনিময়ে এক শতাংশের হাতে সম্পদের মজুদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া মোটেও কোনো উন্নয়ন নয়। তা উন্নয়নের নামে কেবল মাত্র লুটপাটের আয়োজন মাত্র। গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদ- এসবই বর্তমানে হয়ে উঠেছে দেশ ও জনগণের জন্য বড় ধরনের বিপজ্জনক পরিণতির উৎস। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ক্ষমতা-কেন্দ্রিক বিবেচনা থেকে অনুসরণ করা কূটকৌশল দেশের সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক শাসনকে সংহত করার বদলে তাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে। জনগণকে অধিকারহীন করে তুলেছে। গণতন্ত্রকে খর্ব করেছে, যা সাম্প্রদায়িক বিপদ মোকাবিলার প্রধান অস্ত্র ও অবলম্বন। জন-জীবনের সমস্যা নিরসনের গণতান্ত্রিক পথের নিশানা জনগণ যে দেখতে পারছে না, সেই শূন্যতার সুযোগ সাম্প্রদায়িক শক্তি নিয়ে চলেছে। অসৎ পন্থায় কখনো কোনো সৎ উদ্দেশ্য যে শেষ পর্যন্ত হাসিল করা যায় না, সেটি ইতিহাসের শিক্ষা। সাম্প্রদায়িকতার বিপদ মোকাবিলা করতে হলে, গণতন্ত্রের স্বচ্ছ পথ (এক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠান) পরিত্যাগ করা যে চরম আত্মঘাতী পদক্ষেপ, গদি রক্ষার আশু স্বার্থে ক্ষমতাসীনরা তা ভুলে বসে আছে। অসৎ পন্থায় কখনো কোনো সৎ উদ্দেশ্য যে শেষ পর্যন্ত হাসিল করা যায় না, সেটিই ইতিহাসের শিক্ষা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর