বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

কবে জাহাজ ভিড়বে মাতারবাড়ী বন্দরে

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কবে জাহাজ ভিড়বে মাতারবাড়ী বন্দরে

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের জাপানি কনসালটেন্ট নিপ্পন কোয়েইর সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সাল নাগাদ এ বন্দরে জাহাজ ভিড়বে।

এতে দেশের অর্থনীতির সূচক অন্য মাত্রায় পৌঁছবে বলে মনে করছেন বন্দর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা। এ বন্দরের কারণে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত যে অর্থনৈতিক বেল্ট গড়ে উঠছে তা আরও বেগবান হবে। কনসালটেন্টের সঙ্গে গত ২৩ সেপ্টেম্বর চুক্তিস্বাক্ষর হয়েছিল। গত সোমবার থেকে মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে রোলমডেল করেছেন তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিকমতো চললে ২০২৬ সালের মধ্যে এ বন্দরের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৬ সালের নভেম্বর গভীর সমুদ্রবন্দরটির বহুমুখী টার্মিনাল কন্টেইনার জাহাজের জন্য প্রস্তুত হবে এবং ২০২২ সালের আগস্টের মধ্যে একটি কয়লা টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনায় প্রথম ধাপে রয়েছে দুটি টার্মিনাল। সাধারণ পণ্যবাহী ও কনটেইনার টার্মিনালে বড় জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) ভিড়তে পারবে, যেটি এখন বাংলাদেশের কোনো বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারে না। নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কন্টেইনার টার্মিনালটি ১৮ হেক্টর জমিতে নির্মিত হবে এবং ৪৬০ মিটার দীর্ঘ বার্থ থাকবে। এটি ৮ হাজার টিইইউস জাহাজ ধারণ করতে সক্ষম হবে এবং এর বার্ষিক কনটেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা ৬ লাখ থেকে ১.১ মিলিয়ন টিইইউস। পরে কনটেইনার টার্মিনাল প্রসারিত করা হবে ৭০ হেক্টর জমিতে, এ পর্যায়ে একটি ১ হাজার ৮৫০-মিটার বার্থ থাকবে এবং এর বার্ষিক ক্ষমতা হবে ২.৮ মিলিয়ন-টন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি আশা করা যায় না। তাই পিসিটি, বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এটা সময়ের দাবি। ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি ও যাচাই করে মাতারবাড়ীতে বন্দর করা হচ্ছে। ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কনটেইনার টার্মিনাল করা হচ্ছে। যেখানে ৮-১০ হাজার টিইইউস নিয়ে একেকটি জাহাজ ভিড়বে। এখন চট্টগ্রাম বন্দরে দুই-আড়াই হাজার টিইইউস নিয়ে জাহাজ ভিড়তে পারে। আরেকটি মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে যেখানে কার্গো ও কনটেইনার দুই ধরনের জাহাজই আসবে। আধুনিক এ বন্দরের প্রতি ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হবে, কারণ বড় জাহাজে খরচ কম লাগবে। চীন থেকে আমাদের বেশিরভাগ আমদানি পণ্য আসে। মাতারবাড়ী চালু হলে শুরুতে চীন থেকে তিন দিন কমে যায় এবং চট্টগ্রাম-মাতারবাড়ী ৭০ কিলোমিটার ৮-১০ ঘণ্টায় পরিবহন করা সম্ভব। ফিডার ভ্যাসেল থাকবে। ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী নতুন নতুন জেটি, টার্মিনাল তৈরি হবে। এ ছাড়া ফিডার ভ্যাসেল বা ছোট ছোট জাহাজে পণ্য, কনটেইনার চলে আসবে চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে ট্রানজিট সুবিধায় ভারতের ‘ল্যান্ডলক’ এরিয়া বা সেভেন সিস্টার্স এবং নেপাল, ভুটানে চলে যাবে তাদের আমদানি বা রপ্তানিকৃত কনটেইনার বা পণ্য। এখানেই শেষ নয়, সিঙ্গাপুরের চেয়ে কম দূরত্বের মধ্যে মাতারবাড়ী বন্দরের অবস্থান হওয়ায় এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর। এতে আসবে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাবেক সভাপতি ড. ইরশাদ কামাল খান এ প্রসঙ্গে বলেন, আামদের দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্যেও সূচক ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় মাতারবাড়ীর মতো গভীর সমুদ্রবন্দরের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর তাই সরকার সেদিকটাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তা বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, যদি মাতারবাড়ী বন্দর চালু হয় এবং মাদারভ্যাসেল ভেড়ে তাহলে এটি হবে ‘মেরিটাইম হাব’। যার সুফল শুধু বাংলাদেশের আমদানি, রপ্তানিকারক, সরকারই পাবে না একই সঙ্গে প্রতিবেশী দেশগুলোও লাভবান হবে। ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টের আওতায় ভারত, নেপাল, ভুটানের কনটেইনার বা কার্গোই শুধু আসবে না মাতারবাড়ী থেকেই কলকাতা, হলদিয়াসহ কাছের বন্দরগুলোতে ফিডার সার্ভিস চালু হয়ে যাবে। প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে বাংলাদেশ।

সূত্র মতে, ২৬ কিলোমিটার রাস্তাসহ মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণে খরচ হবে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। ৮ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা শুধু বন্দরের জন্য। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিচ্ছে ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে টাকা দেওয়া হবে জমি কেনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী প্রথম ধাপের জন্য ২৮৮ একর জমি অনুমোদন করেছেন। 

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাতারবাড়ী বন্দর চালু হলে কলকাতা, হলদিয়া বন্দরেও ফিডার সার্ভিস চালু হয়ে যাবে। পাশাপাশি ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য, কনটেইনারও পরিবহন হবে মাতারবাড়ী বন্দর দিয়ে। 

সর্বশেষ খবর