বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশের রপ্তানি সুবিধা রিভিউ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

বন্ধ করতে হবে শিশুশ্রম, আইএলও কনভেনশন ১৩৮ অনুস্বাক্ষরের তাগিদ, ৯ শর্ত বাস্তবায়নে চাইছে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অস্ত্র ছাড়া বাকি সব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশকে যে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা (ইবিএ) দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সেটি পুনর্মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। আগামী জানুয়ারিতে এই রিভিউ করা হবে। নতুন সুবিধা দেওয়ার আগে শ্রম খাতের সংস্কারে বাংলাদেশের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখবে ইইউ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, শ্রম খাতের সংস্কারে ইইউর ৯টি শর্ত রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে। একই সঙ্গে যেসব শর্ত বাস্তবায়ন হয়নি সেগুলো কবে নাগাদ বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট টাইমফ্রেম চেয়েছে তারা। জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানোর আগে গত দুই মাসে বাণিজ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে। শ্রম ইস্যুতে সর্বশেষ গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন তিন মন্ত্রণালয়ের সচিব। এর আগে গত মাসে তিন সচিবের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  ইইউ তিন বছর পর পর তাদের ইবিএ সুবিধা রিভিউ করে। নিয়মানুযায়ী আগামী বছরের জানুয়ারিতে তারা আবার এটি রিভিউ করবে। এর আগে তারা শ্রম খাতের সংস্কারে যেসব কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল সেটির অগ্রগতি জানতে চাইছে।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের শ্রম খাতের উন্নয়নে মোট ৯টি শর্ত বাস্তবায়নের তাগিদ রয়েছে ইইউর পক্ষ থেকে। এর মধ্যে ৩টি ইস্যুতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ, এ সংক্রান্ত ‘আইএলও কনভেনশন ১৩৮’ অনুস্বাক্ষর এবং তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের দরকষাকষির জন্য সংগঠন করার সুযোগ আরও সহজ করার বিষয়গুলো কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে, সে বিষয়ে টাইমফ্রেম চাইছে। অন্য শর্তগুলো হচ্ছে : শ্রম সংক্রান্ত আইন সংশোধন, শ্রম আদালতের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা, কর্মীদের জন্য হেল্পলাইন চালু করা, নতুন শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ দেওয়া ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ইইউর দেওয়া বেশির ভাগ শর্ত পূরণে বাংলাদেশের তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি রয়েছে। শ্রম আইন সংশোধন হয়েছে। ইপিজেড-এ শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ৩০ শতাংশের স্বাক্ষর নিয়ে শ্রম সংগঠন করার সুযোগ আছে। এখন ইইউ চাইছে কারখানায় কর্মরত ১০০ শ্রমিকের মধ্যে ১০ জন স্বাক্ষর করলেই সংগঠন করার সুযোগ দিতে হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হলে গার্মেন্ট মালিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমসহ বাংলাদেশকে সব প্রকার শিশুশ্রম থেকে মুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই মধ্যে গার্মেন্ট শিল্প ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করা হয়েছে। আরও ২২টি শিল্প সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম মুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ট্যানারি, চামড়াজাত দ্রব্য, শিপ  ব্রেকিং, সিল্ক, সিরামিক ও কাচ শিল্প সেক্টরের মালিক সমিতির কাছ থেকে ‘শিশু শ্রমিক নিয়োগ করা হয় না’ মর্মে প্রত্যয়ন পাওয়া গেছে। শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে একটি জাতীয় মনিটরিং কোর কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে দেশে শিল্প-কারখানায় শিশুশ্রম নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কভিড-১৯ এর কারণে শিশুশ্রম বন্ধে সরকারের এসব উদ্যোগ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নি¤œ আয়ের অনেক পরিবার যারা সন্তানদের স্কুলে পাঠাত, এখন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সেসব শিশুর অনেকেই কাজে যাচ্ছে। আর এসব কারণে শিশুশ্রম সংক্রান্ত আইএলও কনভেনশনের ১৩৮ ধারা অনুস্বাক্ষর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। ইইউতে যে অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঠানো হবে সেখানে কভিড-১৯ এর ঝুঁকির বিষয়গুলোও তুলে ধরা হবে বলে জানান কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ খবর