শুক্রবার, ২০ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

পাবনায় হত্যা মামলার আসামিদের ৫৪ ধারায় আদালতে সোপর্দ

পুলিশের বিরুদ্ধে খুনে ইন্ধনের অভিযোগ

পাবনা প্রতিনিধি

পাবনায় হত্যা মামলার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে আমিনপুর থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের অবহেলা এবং প্রত্যক্ষ ইন্ধনে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর আবেদন করেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের দাবি, যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই মামলার কার্যক্রম চলছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আমিনপুর থানার আহম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণচর গ্রামের মাছেম মীরের সঙ্গে জমি নিয়ে একই গ্রামের তোফাজ্জল খানের দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। ১৫ নভেম্বর বিকালে এ নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তোফাজ্জল সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে মাছেম মীরকে পেটাতে শুরু করেন। এতে মাছেম মীর (৫৫) বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান। মাছেম মীরকে হত্যার খবর পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনাস্থল থেকে তোফাজ্জল,

গোলাপী ও তানিয়াকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। পরে রাতে এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই হাসেম মীর বাদী হয়ে আটক তিনজনসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে আমিনপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে পুলিশ আটক ওই তিনজনকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে পরদিন ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে। মামলার নথি পর্যালোচনায় পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে পুলিশের প্রত্যক্ষ ইন্ধন ও গাফিলতির কারণেই আসামিরা মাছেম মীরকে হত্যার সুযোগ পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার। নিহতের ভাতিজা ফারুক মীর বলেন, ‘তোফাজ্জল খানের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ১৫ নভেম্বর সকালে আমার বাবা শুকুর মীর ও ভগ্নিপতি বাচ্চু শেখকে পুলিশ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের অপর একটি দল আমাদের বাড়িতে এলে ভয়ে আমরা পালানোর চেষ্টা করি। এই সুযোগে তোফাজ্জল খান দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার চাচা মাছেম মীরকে পিটিয়ে হত্যা করে।’ নিহতের বড় ভাই হাসেম মীর জানান, হত্যাকান্ডের পর হাতেনাতে প্রতিবেশীরা তোফাজ্জল, গোলাপী ও তানিয়াকে আটক করে পুলিশে দিলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ তাদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার না দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করছে। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল গাফফার বলেন, ‘নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মাছেম মীর কীভাবে মারা গেছেন, তা আমরা নিশ্চিত নই। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় আসামিদের হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়নি।’ গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করে আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, পুলিশ নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করছে। অন্য মামলায় আটক থাকলেও হত্যা মামলার এজাহারনামীয় হলে আসামিকে অবশ্যই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন একাধিক আইনজীবী। পাবনা জজ কোর্টের আইনজীবী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হলে এজাহারনামীয় আসামিদের সন্দেহভাজন হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রাপ্তির অপেক্ষায় আসামি গ্রেফতার ও তদন্ত কার্যক্রম থেমে থাকতে পারে না। এটি নজিরবিহীন এবং আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এদিকে হত্যাকারীদের সঙ্গে পুলিশের যোগসাজশের অভিযোগ এনে ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছে নিহতের পরিবার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর