শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

বাবা-মাকে মারধর করে টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে মেয়ে

বরগুনা প্রতিনিধি

পেনশনের টাকার জন্য বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে ডেকে মা-বাবাকে মারধর করে ৬০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে মেয়ে। এ সময় সঙ্গে থাকা জামাতাও তার শ্বশুর-শাশুড়িকে মারপিটে অংশ নেন। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের দুজন কর্মকর্তা ও কয়েকজন সদস্যের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। আহত বাবা-মাকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন বরগুনা সদর উপজেলার আয়লা-পাতাকাটা ইউনিয়নের পাকুরগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুস সোবাহান ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগম। এ বিষয়ে আবদুস সোবাহানের ছেলে জসীম উদ্দীন জানান, তার বাবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করতেন। ২০১৬ সালের জুনে চাকরির মেয়াদ শেষে তিনি অবসরে যান। ২০১৭ সালে পেনশনের টাকা উত্তোলন করে ডাকবিভাগে ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখেন। পেনশনের টাকা পাওয়ার পর থেকেই তার বোন সীমা আক্তার ১ লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাবাকে হয়রানি করতে থাকেন। বাবার কাছে টাকা পাবেন মর্মে গত অক্টোবরের মাঝামাঝি বরগুনা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে বাবা সোবাহান, মা জাহানারা বেগম ও ভাই জসীম উদ্দীনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরে ডিবি পুলিশ গিয়ে সোবাহানকে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে ধরে ডিবি কার্যালয়ে নেয়। এ অবস্থায় স্থানীয় আইনজীবী শফিকুল ইসলাম মজিদ গিয়ে সীমাকে চার শতাংশ জমির মূল্যবাবদ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে ডিবি কার্যালয় থেকে আবদুস সোবাহানকে ছাড়িয়ে আনেন। ১৭ নভেম্বরের মধ্যে টাকা সীমাকে পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু সীমা ৬০ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ টাকা দাবি করতে থাকেন। জসীম উদ্দীন জানান, নির্ধারিত তারিখে ৬০ হাজার টাকা দিতে চাইলেও সীমা ১ লাখ টাকাই দাবি করেন। এ নিয়ে বাবা ও মেয়ের মধ্যে ফের বিরোধ শুরু হয়। একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার দুপুরে ডিবির এএসআই মিজানুর রহমান ফের আবদুস সোবাহানকে ধরতে তার বাড়িতে যান। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য বুধবার সন্ধ্যায় আইনজীবী আবদুল মজিদের চেম্বারে দেখা করতে যান সোবাহান। সেখান থেকে ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডিবির এএসআই মিজান বরগুনা স্টেডিয়াম এলাকা থেকে সোবাহানকে আটক করেন। পরে সোবাহান বলেন, ‘ডিবির ওই অফিসার জামাকাপড় খোল শালা, তোরে অফিসে ডেকেছি যাওনি কেন। তোরে টানায়ে পিটানো হবে, চল অফিসে’ এমন ভাষা ব্যবহার করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পরে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ফের আইনজীবী মজিদ গিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে ডিবি কার্যালয়ে সমঝোতা বৈঠকের সময় ঠিক করে আমাকে ছাড়িয়ে আনেন।’ জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকালে ডিবি কার্যালয়ে উভয় পক্ষ সমঝোতার জন্য বসেন। এ সময় ডিবির এসআই আশরাফ, সুশীল ও এএসআই মিজানসহ ডিবির চার-পাঁচজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সীমা ১ লাখ টাকার দাবিতে অনড় থাকায় সমঝোতা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে ডিবি কার্যালয়ের ভিতরেই বাবা সোবাহান ও মা জাহানারা বেগমকে মারধর শুরু করেন সীমা ও তার স্বামী হাফিজুর রহমান। জাহানারা বেগমের কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকার ব্যাগও কেড়ে নেন তারা। এ সময় সীমা ও তার স্বামীসহ অন্যরা ডিবি কার্যালয়ের ভিতরেই অবস্থান করছিলেন। আইনজীবী আবদুল মজিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী আবদুল মজিদ জানান, মারধরের ঘটনাটি ডিবি কার্যালয়ের ভিতরে ঘটেছে। তিনি সীমা ও তার স্বামীর হাত থেকে সোবাহান ও তার স্ত্রী জাহানারা বেগমকে বাঁচানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ, ডিবি পুলিশের সদস্যরা তখন ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সর্বশেষ খবর