সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দ্বিতীয় ঢেউয়ে আইসিইউ সংকট

ঢাকা মহানগরীতে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা মাত্র ৩০৯, সারা দেশে ৫৫৯

মাহমুদ আজহার ও জয়শ্রী ভাদুড়ী

দ্বিতীয় ঢেউয়ে আইসিইউ সংকট

শীত মৌসুম শুরুর আগেই বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্ত বাড়ায় মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে দেখা যাচ্ছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের শয্যা (আইসিইউ) সংকট। বেসরকারি হাসপাতালেও আইসিইউ শয্যা অপ্রতুল। দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগেই হাসপাতালে আইসিইউ সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীতকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর করোনাকালে আইসিইউ সংকট শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বেই আছে। এখন আমাদের জেলা পর্যায়ে ১০ শয্যা বিশিষ্ট আইসিইউ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, তবে সংকট সময়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সঙ্গে সরকার আইসিইউ নিয়ে চুক্তি করতে পারে। এতে সংকট যেমন কাটবে তেমনই মানুষের আর্থিক খরচও কমবে। তবে আইসিইউ সংখ্যা বাড়াতে হলে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলেরও প্রয়োজন। এ জন্য সরকারকে প্রশিক্ষিত জনবলও নিয়োগ দিতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে করোনা রোগীদের জন্য মোট আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩০৯টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৯২টি। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৩৯টি। এর মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ২৩টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৫৫৯টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৯৪ জন, ফাঁকা রয়েছে ২৬৫টি আইসিইউ শয্যা। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, আইসিইউ ফাঁকা নেই কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৪টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১৮টিতে রোগী রয়েছে। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৪টি শয্যার মধ্যে ১০টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ১৫টি শয্যার মধ্যে ১৩টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। শেখ রাসেল গ্যাসট্রোলিভার হাসপাতালে ১৬টি শয্যার মধ্যে সাতটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল, সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা আছে। আসগর আলী হাসপাতালে ৩১টি শয্যার মধ্যে ২৪টিতে রোগী ভর্তি আছে। স্কয়ার হাসপাতালে ২৫টি শয্যার মধ্যে ১৪টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। ইবনে সিনা হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। ইউনাইটেড হাসপাতালে ২২টি শয্যার মধ্যে ১৫টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা আছে। ইম্পালস হাসপাতালে ৫৬টি শয্যার মধ্যে ১৪টিতে রোগী ভর্তি রয়েছে, এ এম জেড হাসপাতালে একটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৪টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা নেই, বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনটি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা রয়েছে। অথচ এক মাস আগেও দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল। ২২ সেপ্টেম্বর দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা ছিল ১৩ হাজার ৬১৮টি। হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৮১৯ জন। ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৭৭৯টি শয্যা। করোনা  রোগীদের নির্ধারিত আইসিইউ ছিল ৫৩২টি, ফাঁকা ছিল ২৩৪টি। ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ২ হাজার ৮৪৪ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৭৭৪টি। ২৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ২ হাজার ৬৬৮ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৯৫০টি। আইসিইতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৮৪ জন, ফাঁকা ছিল ২৪৮টি আইসিইউ শয্যা। ২৫ সেপ্টেম্বর রোগী ভর্তি ছিল ২ হাজার ৭৬২ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ১০ হাজার ৮৫৬টি। আইসিইতে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৬০ জন, শয্যা ফাঁকা ছিল ২৭২টি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরো বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শীতে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে যে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, বাংলাদেশে তেমন কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না। আমরা যদি সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, বিশেষ করে মাস্ক পরাতে সরকার বাধ্য করে তাহলে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত মানুষকে মাস্ক পরানোই যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সরকারকে আরও কঠোর হতে হবে। তিনি আরও বলেন, জরুরি প্রয়োজনে আইসিইউ সংকটও সরকার কাটাতে পারে। দেশের প্রতিটি সদর হাসপাতালে চার-পাঁচটি করে আইসিইউ স্থাপন করতে পারে সরকার। এ ছাড়া ঢাকার সরকারি বড় বড় হাসপাতালগুলোতে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল, ঢাকা মেডিকেল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলসহ কয়েকটি হাসপাতালে অন্তত একটি করে ফ্লোরে পুরোটাই আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করা যেতে পারে। ঢাকার বেসরকারি সব হাসপাতালে আইসিইউ সংখ্যা আরও বাড়ানো যেতে পারে। এতে শুধু করোনাই নয়, যে কোনো জরুরি রোগীদের আইসিইউ সংকট কাটতে পারে।

সর্বশেষ খবর