মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
কৃষি

ধান কুড়ানোয় মেতেছে শিশুরা

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

ধান কুড়ানোয় মেতেছে শিশুরা

পঞ্চগড়ে ধান কুড়ানোর আনন্দে মেতেছে গ্রামীণ শিশু। চাষির কেটে নেওয়া ধানের গাছ থেকে ঝরে পড়া শীষ দেখেই কচি পায়ের দৌড়। কুড়িয়ে নিচ্ছে শিশুর দল। এ নিয়ে হচ্ছে প্রতিযোগিতাও। তারা ইঁদুরের গর্ত থেকেও ধান সংগ্রহ করছে। জড়ো করছে বাড়িতে। বাবার সঙ্গে বাজারে যাবে এক দিন। বেচবে। সেই টাকা দিয়ে হবে নতুন জামাকাপড়, ক্রিকেট ব্যাট। হবে পিকনিক। মায়াময় এই দৃশ্য দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ছেন বড়রা। এই আনন্দে বাধা দিচ্ছেন না বাবা-মা। চাষিদের ধান কাটার উৎসবে শিশুরা যোগ দেওয়ায় তারাও খুশি। এই সংস্কৃতি অনেক পুরনো। এখানে ধানের পরিমাণ মুখ্য নয়, আনন্দটাই বড়। তেঁতুলিয়া উপজেলার কাটাপাড়া গ্রামে বিরাট ধান খেতে দেখা যায় পাশের কয়েকটি গ্রাম থেকে শিশুরা এসেছে ধান কুড়াতে। চাষিরা ঘাড়ে করে ধানের বোঝা নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ি। ডিমাগজ গ্রাম থেকে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে এসেছে সাদিয়া আক্তার। সে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সে জানায়, পিকনিকের চাঁদার জন্য ধান কুড়াতে এসেছে। রিদিকা সরকার শহরের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। করোনা সংকটে স্কুল বন্ধ থাকায় দাদা-দাদির সঙ্গে গ্রামেই থাকে। সেও এখন বন্ধুদের সঙ্গে ধান কুড়ানোর আনন্দে আছে। সে জানায়, ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে সে। ডাক্তারপাড়া গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী জিসান হোসেন জানায়, ক্রিকেটের ব্যাটটি পুরান হয়ে গেছে। নতুন ব্যাট কিনবে সে। তাই ধান কুড়াচ্ছে। গীতালগছ গ্রামের আবদুস সামাদ (৪৫) জানান, ছোটবেলায় ধান কুড়াতে গিয়ে অনেক আনন্দ করেছি। এখানে ধানের পরিমাণ ব্যাপার নয়। আনন্দটাই অন্যরকম। ধান কুড়ানোর অনেক স্মৃতি আছে। শিশুদের দেখে এসব মনে পড়ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইব্রাহীম এলিন জানান, ধান কুড়ানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। জেলার প্রায় সব মানুষের জীবনেই ধান কুড়ানোর স্মৃতি মেখে আছে। ধান কুড়ানো মানেই অন্যরকম সুখ। শিশুদের ধান কুড়ানোর আনন্দ তাদের মনোজাগতিক বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন শিশু বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংকটের কারণে শহুরে শিশুরা যখন চার দেয়ালের মাঝে বন্দী হয়ে পড়েছে, তখন গ্রামীণ শিশুরা এসব আনন্দে মেতে আছে। তারা প্রকৃতির সঙ্গ পাচ্ছে। এ আনন্দ তাদের দৈহিক গঠনেও কাজে লাগবে। পঞ্চগড় জেলা শিশু কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, উত্তরবঙ্গে শিশুদের ধান কুড়ানো অনেক আগে থেকেই একটি প্রচলিত সংস্কৃতি। লেখাপড়ার চাপে শিশুদের আনন্দ উদযাপনের এই সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল। করোনা সংকটে স্কুল বন্ধের কারণে তারা আবার সেই আনন্দ উপভোগ করছে। শিশুদের মেধা বিকাশে এই আনন্দ বিরাট ভূমিকা রাখবে।

ডিসেম্বরেই পড়বে প্রবল শীত। হাড় কাঁপানো শীতে শিশুরা জড়োসড়ো হয়ে পড়বে। তখন মাঠে থাকবে না ধান। বিশাল মাঠে দৌড়াদৌড়ি হয়তো বন্ধ হয়ে যাবে তাদের। শীতের কাপড়ের সংকটে পড়বে তারা। এ ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মানুষ।

 

সর্বশেষ খবর