বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

সাপ খেলায় পেট বাঁচে না বেদেদের

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সাপ খেলায় পেট বাঁচে না বেদেদের

মেঠো পথ ধরে ভেসে আসা চিরচেনা বেদেদের সেই সুর ‘খা-খা-খা-বখখিলারে খা-! কাঁচা ধইরা খা-’ কিংবা ‘সিঙ্গা লাগাই, দাঁতের পোক ফালাই’ ইত্যাদি আর শোনা যায় না। ডিজিটাল যুগে বেদে-বেদেনিদের এসব সুর এখন আর কারও মনে নাড়া বা সাড়া দেয় না। ফলে বিষধর সাপ নিয়ে খেলার সেই বেদেরা এখন খুব অসহায়। খেলা দেখিয়ে আর পেট চলে না তাদের। ওইসব বেদেরা এখন সড়কপথে কিংবা বিভিন্ন হাট-বাজার সংলগ্ন স্থানে ছোট-ছোট ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করে। সেখান থেকেই সাপ খেলার পাশাপাশি বেদেনিরা তাবিজ-কবজ নিয়ে ঘুরে বেড়ায় গাঁয়ের মেঠোপথে। বেঁচে থাকার সংগ্রামে আজ তাদের ভিন্ন পথে চলতে হচ্ছে। তাদের অনেকেই এরই মধ্যে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছে। এই অবস্থায় এখনো যারা এ পেশাকে আগলে রেখেছে তাদের জীবন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ঠিকানাবিহীন চলা দুটি বেদে বহর এসেছে দিনাজপুর সদরের শেখপুরা ইউনিয়নের গাবুরা এলাকায় গর্ভেশ্বরী নদীর তীরের চরে। তাঁবু খাটিয়ে ছোট ছোট পরিসরে ঘরের সঙ্গে আরেক ঘর। এক বহরে ২৫টি এবং নদীর অপর পাড়ে আরেকটিতে ২০টি পরিবারের দল আশ্রয় নিয়েছে। কথা হয় এক বহরের সর্দার আইনুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পেটের কষ্টে নিজ বাড়িতে না থেকে জীবিকার জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাই। ২৫টি পরিবারের দল নিয়ে যাত্রা করেছি। আমাদের বাড়ি সাভারের কাঞ্চনপুর, পোড়াবাড়ী ও অমরপুর এলাকায়। সাভার থেকে আসতে এর মধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় আমরা থেকেছি। প্রথমে সাভার থেকে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রামে। পরে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী হয়ে রংপুর জেলার পাগলাপীর এলাকার পর বর্তমানে দিনাজপুরে। কর্মক্ষেত্রের ওপর নির্ভর করে কোনো জায়গায় এক মাস থেকে দেড় মাস পর্যন্ত থাকি। আগে বাব-দাদারা নৌকাতেই বসবাস করত। এখন বছরের ৯ মাস আমরা জীবিকা নির্বাহের জন্য বাড়ির বাইরে থাকি। এরপর বাড়িতে যাই। তখন তিন মাস পর্যন্ত অবস্থান করি।’ সর্দার আরও জানান, চিরিরবন্দর উপজেলায় খেলা দেখাতে গিয়ে মাত্র দুইশ টাকা আয় হয়। দিন দিন আয় কমে গেছে। তাই পেশার পরিবর্তন ঘটছে। আগের মতো উপার্জন না থাকায় অনেকে পরিবারই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও কোনো সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে অনেক দুঃখে কষ্টে জীবন চালাতে হয়। সর্দার বলেন, ‘সাপ খেলায় এখন আর পেট বাঁচে না। কেউ দিচ্ছে বিভিন্ন রোগের ঝাড়ফুঁঁক ও তাবিজ-কবজ। আবার কেউ বিক্রি করছে শাড়ি, চুড়িসহ প্রসাধনী। কেউ কেউ ভানুমতির খেলা ও জাদুমন্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছে হাটবাজারে।’

এই সময় বহরের ২২ বছর বয়সী এক যুবক আরিফ জানায়, লেখাপড়া শিখার ইচ্ছে ছিল কিন্তু অভাবের সংসারে তা সম্ভব হয়ে ওঠে নাই। তবে অন্য পেশা পেলে এই পেশা ছেড়ে দেবেন তিনি।

সর্বশেষ খবর