শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

এখনো অনড় ট্রাম্প

বাইডেন বললেন, আমেরিকা ইজ ব্যাক

প্রতিদিন ডেস্ক

এখনো অনড় ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে সবুজ সংকেত দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই সুর পাল্টেছেন পরাজিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখন বলছেন, ‘কখনো পরাজয় মানব না।’ অন্যদিকে জো বাইডেন বলছেন, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। তিনি উল্লেখ করেন, আমেরিকা ফের বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী মার্কিন নির্বাচনে হেরে গিয়ে অনেকটাই এলোমেলো ডোনাল্ড ট্রাম্প। একবার পরাজয় মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে পরক্ষণেই তার উল্টো টুইট করছেন। সবশেষ টুইটে ফের ইউটার্ন নিলেন ট্রাম্প। কখনো পরাজয় মানবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ এর কয়েক ঘণ্টা আগে টুইটে ট্রাম্প হার মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন। স্থানীয় সময় সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনকে প্রস্তুতি শুরু করার চিঠি দেয়। কিছুক্ষণ পর ডোনাল্ড ট্রাম্প জিএসএ-প্রধান এমিলি মারফিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টুইট করেন। এতে বিষয়টি পরিষ্কার হয় যে, ট্রাম্প নমনীয় হয়েছেন। তিনি ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে হাঁটছেন। কিন্তু এর মাত্র পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে সোমবার মধ্যরাতে দেওয়া আরেক টুইটে ট্রাম্প লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুর্নীতির নির্বাচনে তিনি কখনো পরাজয় মেনে নেবেন না। ভুয়া ব্যালটের কাছে তিনি কখনো পরাজয় মেনে নেবেন না।’ মঙ্গলবার সকালে আরেক টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘মনে রাখবেন- জিএসএ দুর্দান্ত এবং এমিলি মারফি দারুণ কাজ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হবেন, তা জিএসএ ঠিক করে দেয় না।’ মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ট্রাম্পের বারবার এ অবস্থান বদলকে তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তার দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন। তাঁরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ভোট কারটুপির অভিযোগ নিম্ন আদালতে খারিজ হওয়ার পর এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের দিকে তাকিয়ে আছেন।

আমেরিকা ইজ ব্যাক : মঙ্গলবার ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে এক অনুষ্ঠানে নিজের পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা দলের কর্মকর্তাদের নাম জানিয়ে ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন বলেছেন, এই দলের মাধ্যমে এটাই প্রতিফলিত হতে যাচ্ছে যে ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। জানুয়ারির ২০ তারিখ দায়িত্বভার নেওয়ার পর ট্রাম্প অনুসৃত ‘একতরফা জাতীয়তাবাদ’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে নেওয়ারও ইঙ্গিত দেন ৭৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।

ডেমোক্র্যাট প্রার্থিতার দৌড়ে তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা দুই বাম ঘরানার সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন না বলেও ধারণা দেন তিনি।

তবে বাইডেন বলেন, কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে রিপাবলিকানদের আধিপত্য ঠেকাতে ওই দুজনের ভোট তার জন্য খুবই জরুরি। ট্রাম্পের চার বছর ইউরোপ ও বিশ্বের অন্যত্র যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো মিত্রদের তুমুল অস্বস্তিতে ফেলেছিল। সামরিক জোট ন্যাটোর অন্য সদস্যদের সঙ্গে দূরত্ব, মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তি ও সংস্থা থেকে বেরিয়ে আসা এবং কর্তৃত্ববাদী শাসকদের সঙ্গে ট্রাম্পের সুসম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতাকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে বাইডেন বলেন, ‘এটা সেই দল যার মাধ্যমে প্রতীয়মান হবে যে আমেরিকা ফিরছে এবং পিছু না হটে বিশ্বকে ফের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। ফের টেবিলে প্রধান হিসেবে বসে শত্রুদের মুখোমুখি হতে এবং মিত্রদের খারিজ না করতে প্রস্তুত। প্রস্তুত নিজেদের মূল্যবোধগুলোর জন্য দৃঢ়পায়ে দাঁড়াতে।’

হোয়াইট হাউসে বিদায়ের সুর : গত চার বছর হোয়াইট হাউস থেকেই নানা কর্মকা-ের মাধ্যমে প্রায় প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রকে মাতিয়ে রেখেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যমে গত চার বছরে এমন কম দিনই গেছে যেদিন সংবাদের শিরোনামে ছিলেন না ট্রাম্প। এখন তাঁর ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। তাই বিদায়ের করুণ আবহাওয়া বিরাজ করছে হোয়াইট হাউসে।

 মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, গত দুই সপ্তাহ থেকে হোয়াইট হাউসে কোনো চাঞ্চল্য নেই। অনেকটাই শান্ত হয়ে পড়েছে ওয়েস্ট উইং নামে হোয়াইট হাউসের এলাকাটি। প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম পলিটিকো এক প্রতিবেদনে বলেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার শিবিরেও নীরবতা বিরাজ করছে। থ্যাংকস গিভিং উপলক্ষে অনেক কর্মী প্রচার শিবির ছেড়ে গেছেন। এসব কর্মী জানেন, শিগগির তাঁদের অন্য কোনো কাজ খুঁজে নিতে হবে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মহলের বরাত দিয়ে পলিটিকো বলেছে, ট্রাম্প সবাইকে দেখাচ্ছেন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও তাঁর এক পা এখন দরজার বাইরে। আড়ালে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার কাজও সারছেন তিনি। নিজের সমর্থকদের নিয়ে রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম গড়ার কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। পরের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্যও মনস্থির করছেন। পাশাপাশি ট্রাম্প ২০ জানুয়ারির পর নিজের মিডিয়া কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন এমন কথাও বলা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর