বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে প্রধান নির্বাহী কাজী ওসমান আলী

দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ভূমিকা রেখে চলেছে

আলী রিয়াজ

দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ভূমিকা রেখে চলেছে

‘দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে ২৫ বছর পার করেছে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিডেট (এসআইবিএল)। এ দীর্ঘ সময়ে দেশের অর্থনীতিতে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকেরও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক সাফল্যেও ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। অর্থনৈতিক যে কোনো অর্জনের সঙ্গেই এ ব্যাংক অংশীদার।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী ওসমান আলী এ কথা বলেন। ওসমান আলী আরও বলেন, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের যাত্রা ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর। ব্যাংকের স্লোগান ‘উৎকর্ষ অবিরাম’। এ স্লোগান শুধু বলা বা লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং সত্যিকার অর্থেই সর্বোৎকৃষ্ট গ্রাহকসেবার মাধ্যমে ব্যাংকটি তার অবিরাম উৎকর্ষের পথে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা সম্পদের ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে গ্রাহকদের আমানত আছে প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকার এবং আমরা প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। দেশব্যাপী ১৬১টি শাখা, ৫৪টি উপশাখা, ১৩৩টি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, ১৪০টি এটিএম বুথ এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপসহ প্রযুুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকসেবা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংকের গ্রাহকসংখ্যা ১৫ লাখের অধিক। এ বিপুলসংখ্যক গ্রাহকই আমাদের মূলশক্তি। তাদের সন্তুষ্টিই আমাদের বড় অর্জন। এ দীর্ঘযাত্রায় দেশীয় শিল্প বিকাশ, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার, এসএমই উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আমদানি-রপ্তানি ও রেমিট্যান্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারী বিশ্ব অর্থনীতিতে যেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। এ মহামারীর কারণে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে ব্যাংকিং খাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তিনি বলেন, ‘সে অনুযায়ী আমরা সংকটময় সময়েও আমাদের সব শাখার মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিয়েছি। এক দিনের জন্যও কোনো সেবা বন্ধ ছিল না। যদিও আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, একজন মারাও গেছেন। তার পরও আমরা থেমে নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের স্বল্প মুনাফায় বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করেছি। প্রবাসফেরতদের জন্য প্রবাসী অগ্রযাত্রা ও প্রবাসী উদ্যোগ নামে চালু করেছি বিশেষ দুটি পুনর্বাসন বিনিয়োগ প্রকল্প। বিদেশফেরত প্রবাসীরা ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষিভিত্তিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জামানতবিহীন ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ সুবিধা নিয়ে দেশের অভ্যন্তরেই নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবেন এ প্রকল্পসমূহের আওতায়।’

এসআইবিএল এমডি বলেন, ‘গত এপ্রিল থেকে আমরা বিনিয়োগের মুনাফার হার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছি। বিনিয়োগের মুনাফার হার কমার ফলে সাময়িকভাবে ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি আমানত স্কিমে যেগুলোয় মুনাফার হার বেশি ছিল সেগুলোয় সমন্বয় করা হচ্ছে। এখন সময় এসেছে তহবিল ব্যবস্থাপনা ভালো করার, ডিপোজিট মিক্স টেকসই করে ব্যয় কমানোর, ব্যাংকারদের কর্মদক্ষতা বাড়ানোর, ব্যাংকের সব কর্মকান্ডকে ডিজিটাল করার, খেলাপি বিনিয়োগ কমানোর। কাজী ওসমান আলী বলেন, ‘এসআইবিএলকে আমরা ক্রমেই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। পেপারলেস ব্যাংকিংকে উৎসাহিত করতে শাখা পর্যায় থেকে সব প্রস্তাব অনলাইনে প্রেরণ এবং অনলাইনেই অনুমোদন করা হয়। ২৪ ঘণ্টা ব্যাংকিং সেবা প্রদানের জন্য চালু করেছি একটি পূর্ণাঙ্গ কল সেন্টার। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল অ্যাপের সুবিধা যুগোপযোগী করেছি এবং সেবার আওতাও বাড়িয়েছি। চালু করেছি ই-অ্যাকাউন্ট সেবা। ব্যাংকের ফরেন ট্রেডকে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার অধীনে আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। রেমিট্যান্স সেবাকে ডিজিটালাইজেশন করা হচ্ছে। আমাদের ঢাকায় একটি ও চট্টগ্রামে একটি সেন্ট্রালাইজ্ড ট্রেড প্রসেসিং ইউনিট রয়েছে যেখানে অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা ব্যাংকের সব নন এডি শাখার ফরেন ট্রেড দ্রুত সময়ে প্রসেস করে থাকেন। এর পাশাপাশি ব্যাংক দ্রুত সময়ে প্রবাসী রেমিট্যান্স প্রসেস করার জন্য প্রধান কার্যালয়ে একটি সেন্ট্রালাইজ্ড রেমিট্যান্স প্রসেসিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। এ বছর আমাদের রেমিট্যান্স প্রায় ৪০% প্রবৃদ্ধি হয়েছে।’

বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, ‘বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পরিচালিত আওকাফ প্রপার্টিজ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের মালিকানায় অংশীদার রয়েছে। এ ফান্ডে বিনিয়োগের ফলে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অন্যান্য বিনিয়োগ সহযোগীর সঙ্গে ব্যাংকের সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ব্যাংকের মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়া আমরা বর্তমানে দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক একটি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক কোম্পানির সঙ্গে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুকুক ইস্যু নিয়ে কাজ করছি যা এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের অপেক্ষায়। বর্তমানে আমাদের ডেবিট কার্ডের গ্রাহক আছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক প্রায় ২০ হাজার। এ ছাড়া রয়েছে প্রিপেইড কার্ড, গিফট কার্ড, হজ কার্ড ইত্যাদি। এসব কার্ডের গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর জন্য গ্রাহকদের নানান সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি ফেরাতে এবং আয় হারানো মানুষের মাঝে তারল্য প্রবাহ সঞ্চারণের জন্য ব্যাংকিং খাতের নিরবচ্ছিন্ন সেবা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে উঠেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে আমরা সে কাজটি করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর